নুসরাত ফারিয়া এমন এক নাম যার মধ্যে লুকিয়ে আছে লক্ষ-কোটি ভক্ত-দর্শকের ভালোবাসা। কারণ এতো কম সময়ে এদেশের আর কোর মডেলকে এতো বড় সাফল্যের অংশীদার হতে দেখা যায়নি। তিনি একাধারে চাহিদাসম্পন্ন মডেল। উপস্থাপিকা হিসাবেও পেয়েছেন আশাকচুম্বী সাফল্য। এখন শুধু এ দুটিতেই নয়, বড়পর্দায়ও তিনি প্রথম বারেই সাফল্য দেখিয়েছেন। এক ছবি ‘আশিকি’ দিয়েই তাকে চিনেছে বাংলাদেশ ও কলকতার অসংখ্য সিনেমাপ্রেমী মানুষ। তার সাফ্যেলর রথ এখানেই থেমে নেই। তিনি এখন চলেছেন বলিউডের আঙিনায়। ইমরান হাশমির মতো প্রথম সারির বলিউড তারকার সঙ্গে তিনি অভিনয় করবেন শিগগিরই। তবে এই উপস্থাপিকাকে নানাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে টিভি বিজ্ঞাপনে। তবে দীর্ঘদিন তাকে কোন নতুন টিভিসিতে দেখা যাচ্ছে না। তার কোটি ভক্তের মতো টিভিসি অঙ্গনটিও নিশ্চয়ই এই লাস্যময়ী তারকাকে মিস করছে। তার বিজ্ঞাপন ক্যারিয়ার নিয়ে এই ফিচার-
ঢাকার একটি সংগঠনের আয়োজনে বলিউডের জনপ্রিয় গায়িকা সুনিধি চৌহানের লাইভ কনসার্টের উপস্থাপনা দিয়েই তাঁর শুরু। এরপর বিজ্ঞাপন যাত্রা। প্রথমেই করেন বাংলালিংকের থ্রিজির একটি টিভিসি। পরে বাংলালিংকেরই আরো কয়েকটি টিভিসি ও বিলবোর্ডের মডেল হন তিনি। ওসব বিজ্ঞাপনে বেশ কজন মডেলের সঙ্গে পাশাপাশি পারফর্ম করতে হয় তাঁকে। তাই সুযোগ খুঁজতে থাকেন সলো পারফরর্মেন্সের। তাঁকে এই সুযোগটা দেন নির্মাতা আদনান আল রাজীব। তাঁর নির্দেশনায় সেন্টার ফ্রেশের মডেল হন নুসরাত ফারিয়া।
‘এত দিন আমাকে শুধু দেখানো হতো ক্রেজি গার্ল হিসেবে। কিন্তু এখানে আমাকে প্রথমবারের মতো আহ্লাদে গদগদ এক মেয়ের চরিত্রে উপস্থাপন করা হয়। সেই সঙ্গে মেয়েটির চঞ্চলতাও প্রকাশ পায়।’ সেন্টার ফ্রেশের টিভিসি নিয়ে বলছিলেন নুসরাত ফারিয়া।
যে টিভিসি নিয়ে এত আলোচনা, তা কি পাঠক মনে করতে পারছেন? এর কাহিনী ছিল, ‘একটি পাবলিক বাসে গাদাগাদি করে লোকজন বসে-দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। ড্রাইভার আচমকা ব্রেক কষলেই সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি ঠিক পেছনে দাঁড়ানো অপরিচিত ছেলেটির দিকে ঝুঁকে পড়ে। ড্রাইভার তো ব্রেক কষেই খালাস। কিন্তু পেছনের ছেলে বেচারা তো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কারণ মেয়েটি যে তাঁর হাই হিল দিয়ে ছেলেটির পা মাড়িয়ে একেবারে যাচ্ছেতাই করে দিয়েছে। ছেলেটির তাতেও রক্ষা নেই। কারণ সে যে সেন্টার ফ্রেশ খাচ্ছিল। তাই তো এবার ড্রাইভার ব্রেক না কষলেও মেয়েটা লাজ-লজ্জা সব ভুলে অপরিচিত ছেলেটির পায়ে আবার পাড়া দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ছেলেটিও তো কম যায় না। বিষয়টা চট করে বুঝে সে-ও পায়ের জায়গায় শুধু জুতা রেখে পা-টাকে সরিয়ে ফেলে হাইহিলের পাড়া খাওয়ার ভয়ে। তবে মেয়েটির ইচ্ছাও যে তাকে পূরণ করতে হবে। তাই তো পায়ে পাড়া না লাগলেও সে মুখ হা করে প্রচণ্ড চিৎকারে পুরো বাস মাথায় করে ফেলে। আর মেয়েটিও ছেলেটির মুখে থাকা সেন্টার ফ্রেশের গন্ধে আবারও বিমোহিত হয়।’ এই কাহিনীচিত্রের মেয়েটিই নুসরাত ফারিয়া আর ছেলেটি ছিল আবীর। দর্শকপ্রিয় এই বিজ্ঞাপনটি তৈরি হয়েছিল ২০১৩ সালে। কোনো ব্যস্ত রাস্তায় নয়, পুরো বিজ্ঞাপনের শুটিং হয় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত কোক স্টুডিওতে।
এই বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত নিয়ে নুসরাত ফারিয়া বলেন, ‘আমার সবচেয়ে ভালো লাগে যখন আমি আবীরের মুখে সেন্টার ফেশের গন্ধে ভেতর থেকে মুগ্ধতা প্রকাশ করি। স্ক্রিনে দেখার পর আমি নিজেই নিজের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।’
দর্শকের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেয়েছেন? ‘যতটুকু মনে আছে, আমি একটা গেট টুগেদারে একটা স্কুলে গিয়েছিলাম। তো প্রথম থেকেই আমি একটা বিষয় লক্ষ করছিলাম যে কিছু স্কুলপড়ুয়া ১৫-১৬ বছরের ছেলে আমাকে নিয়ে কিছু একটা বলাবলি করছে। তো আমি অতটা পাত্তা দিলাম না। কিছুক্ষণ পর দেখলাম সেখানে পাঁচটি ছেলের জায়গায় ২০-২৫টি ছেলে জড়ো হয়েছে এবং আমি যখন তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই ওই ছেলেগুলো জোরে চিৎকার করল। আমি তখনই বিষয়টা বুঝতে পারলাম যে আমার টিভিসিটা দেখে আমার সহমডেল আবীরের মতো করে চিৎকার করল তারা। তখন আমি তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করলাম। তবে ওই সময়টুকুর মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই কেউ না কেউ আবদার করতে লাগল, আপু আমার পায়ে একটা পাড়া দেন। এ ঘটনা সত্যিই আমাকে অনেক সারপ্রাইজড করেছে।’ বলছিলেন নুসরাত ফারিয়া।
কথার পিঠে তিনি আবারও জোরে বলে উঠলেন, ‘আমার সহমডেল আবীরকে নিয়ে একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি। শুটিংয়ের সময় বারবার তার পায়ে পাড়া দিতে থাকলে সে আমাকে কেমন বোকা বোকা কণ্ঠে বলে উঠল, এখন তো খুব পাড়া দিচ্ছ, আর আগে পাত্তাই দাওনি। আমি তো অবাক! বলে কি? পরে সেই বলল, আগে থেকেই নাকি ফেসবুকে সে আমাকে ফলো করত। কিন্তু আমি নাকি কোনো রেসপন্স করতাম না।’
You must be logged in to post a comment.