ছোটবেলায় বাবা তাঁর কর্মকাণ্ড দেখে সুপারওম্যান বলে ডাকতেন। শ্রাবণ্য স্কুল-কলেজের কোথাও লেখাপড়ায় দ্বিতীয় হননি। সেই সঙ্গে গান, নাচ, আবৃত্তি, বক্তৃতা-সবখানে তাঁর জন্য প্রথম স্থানটি রেখে দিতে হতো! বাঁকা দাঁতের ভুবন ভোলানো হাসির জন্য মা আদর করে ডাকেন ‘সুহাসিনী’। বন্ধুরা সব সময় বলত-তুই কিসে কম! এত এত কোয়ালিটি। অভিনয়টাও ভালো পারিস। আমাদের মন বলছে, মিডিয়া তোকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, দরজা খোলা। তাঁকে ঘিরে বন্ধুদের প্রত্যাশা শ্রাবণ্যর ভালোই লাগত। মিডিয়ার প্রতি নিজেরও একটা ভালো লাগা ছোটবেলা থেকেই।
কিন্তু পড়াশোনায়ও যে তাঁকে সেরা হতে হবে, এ জন্য তখন আর মিডিয়ায় কাজ করতে পারেননি। তত দিনে শ্রাবণ্য সরকারি মেডিক্যালে চান্স পেয়েছেন, ডাক্তারি পড়া শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হয়ে সরকারি হাসপাতালে চাকরিও করছেন। কিন্তু মনের কোণের ভালো লাগাটা রয়েই যায়। সুযোগ বুঝে একটা ফটোসেশন করে ফেলেন ফটোগ্রাফার ফয়সাল মাসুমের কাছে।
আর সেই ছবি দেখে ঠিকই ডাক আসে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের মডেল হিসেবে কাজ করার। শ্রাবণ্যও টুকটাক কাজ করছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী যখন তাঁকে ছবি দেখে নিজের পরিচালিত গ্রিন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞাপনের জন্য নির্বাচন করেন, তখন তাঁর চিন্তায় অনেকটা পরিবর্তন আসে। আর ছোটবেলা থেকেই তিনি সব দিক সামলে চলতে পারেন। তাই চ্যালেঞ্জটা নিয়েই টিভিসির শুটিং করেন। সব কিছুতে যখন প্রথম, এ জায়গাটাই বা বাদ থাকে কেন? মডেলিংয়েও প্রথম কাজেই বেশ সাড়া। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি।
একে একে কাজ করেছেন ট্যাংগো জুস, গ্রামীণফোন, ইসিবি ব্যাংক, আরএফএল কিচেন সিঙ্ক, ইস্পাহানি চা, রবিসহ আরো বেশ কিছু টিভিসিতে। তিনি রবির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে প্রচার হচ্ছে তাঁর প্যারাশুট অ্যাডভান্সড বেলি ফুল লাইটের টিভিসিটি। এটির শুটিং হয়েছিল তেজগাঁওয়ের কোক স্টুডিওতে। আর রাস্তার দৃশ্যগুলোর শুটিং হয় কোকের সামনের রাস্তায়ই। তবে অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, এতগুলো টিভিসিতে কাজ করেছেন শ্রাবণ্য, অথচ এখন পর্যন্ত তাঁকে শুটিংয়ের জন্য কোক স্টুডিওর বাইরে যেতে হয়নি। দু-একবার আউটডোরে হবে-এমন টিভিসির অফার পেলেও তিনি করতে পারেননি। ডাক্তারের কর্তব্য, বিভিন্ন টিভির উপস্থাপনা ও পরিবারের জন্য ঢাকার বাইরে কাজ করা সম্ভব নয়। এতে দাদি-নাতনিকে নিয়ে বানানো সাবিলা নূরের করা গ্রামীণফোনের হিট টিভিসিটা হাতছাড়া হয়ে যায় তাঁর। এ জন্য তিনি বেশ আক্ষেপও করেছেন পরে।
হাসপাতালে রোগীদের সেবা করার সময় তাঁকে রোগীরা চিনে ফেলে টিভিসি বা উপস্থাপনার প্রশংসা করলে তাঁর সব আক্ষেপ দূর হয়ে যায়। বললেন, ‘অনেকে বলে, আপনি এত ছোট একটা মানুষ হয়ে এত বড় ডাক্তার কিভাবে হলেন, তখন আমার সব কষ্ট সার্থক মনে হয়।’
চিকিৎসাশাস্ত্রের উচ্চতর পড়াশোনা এফসিপিএসও করছেন শ্রাবণ্য।
খুব শিগগির শ্রাবণ্যকে নতুন আরো দুটি টিভিসিতে দেখা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে আরএফএল কুকার হুড ও স্কয়ারের একটি। শ্রাবণ্য মনে করছেন, এই টিভিসি দুটি তাঁকে মডেল হিসেবে আরো ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে। টিভিসি দুটির নির্মাণ যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি তাঁর পারফরম্যান্স নিয়েও তিনি সন্তুষ্ট। অনেক কষ্টও করতে হয়েছে তাঁকে। যেতে হয়েছে হাসপাতাল পর্যন্ত। ‘আমাদের শুটিং হয়েছিল কোক স্টুডিওতে। টিভিসির যাবতীয় শুটিং শেষ। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে পরিচালক আমাকে বললেন, সাঁকোর ওপর থেকে পড়ে যাওয়ার ওই শটটা আবার দিতে হবে। তবে তোমাকে একেবারে পড়তে হবে না। শুধু এক্সপ্রেশন দেবে, যাতে মনে হয় তুমি পড়ে যাচ্ছ। কিন্তু আমি আরো বেশি ডেডিকেশন নিয়ে কাজটা করতে চেয়েছিলাম। তাই এমনভাবে শটটা দিলাম, যাতে ফেইক মনে না হয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি, আমি ইউনাইটেড হাসপাতালের বেডে। সবাই তো খুব চিন্তিত হয়ে পড়বে, তাই বললাম, আমার কিছুই হয়নি। আপনারা চিন্তা করবেন না। পরে জানতে পারলাম, ১৫ ফুট উঁচুতে তৈরি করা সাঁকোটির দড়ি খুবই দুর্বল ছিল। আমার ভার বহন করতে না পেরে ওটা ছিঁড়ে যায়। আর শট শেষ হয়ে গিয়েছিল ভেবে ইউনিটের লোকজন নিচে থাকা ফোমও সরিয়ে ফেলেছিল। ফলে পড়েছিলাম একেবারে শক্ত ফ্লোরের ওপর। এ জন্যই আর কাউকে অভয় দিয়ে পাত্তা পেলাম না। শুয়ে থাকতেই হলো হাসপাতালে।’
এ ছাড়া জ্ঞান ফিরলেই শ্রাবণ্য তাঁর পরিচালককে বলেছিলেন-চলেন, শুটিংটা শেষ করে ফেলি! তাঁর সিরিয়াসনেস দেখে খুবই খুশি হয়েছিলেন পরিচালক।
You must be logged in to post a comment.