উপস্থাপিকা। তবে মডেলিং করেও সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছেন নাবিলা। এবারের শীতে মেরিল লিপজেলের বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়ে বনে গেছেন সেলফি কুইন। এই বিজ্ঞাপন তারকাকে নিয়ে লিখেছেন আল মাসিদ
২০১৩ সালে আদনান আল রাজীবের নির্দেশনায় ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বডি ফেয়ারনেস মিল্কের বিজ্ঞাপন করে মডেল হিসেবেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা নাবিলা। এই বিজ্ঞাপনে এ সময়ের আরেক জনপ্রিয় উপস্থাপিকা নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে নাবিলার পারফরম্যান্স সবাইকে মুগ্ধ করে। নাবিলা বলেন, ‘এখানে আমি আমার সহজাত চরিত্রই প্লে করেছিলাম। আমি ব্যক্তিজীবনে খুবই গোছাল স্বভাবের, সেই সঙ্গে চুপচাপ আর সজাগ। বাস্তবজীবনে মানুষের ভুল চোখে পড়লে একটু বিনয়ের সুরে উপদেশ দিতে খুব ভালোবাসি। এই বিজ্ঞাপনেও ফারিয়াকে মুখের রঙের সঙ্গে বডির রঙের পার্থক্যটা ধরিয়ে দিয়ে তাঁর সমাধানও দিই আমি। এ কাজটিই দর্শক খুব এনজয় করেছে।’
ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বডি ফেয়ারনেসের টিভিসির জন্য সবাই নাবিলাকে মডেল হিসেবে চিনলেও তাঁর বিজ্ঞাপন ক্যারিয়ার কিন্তু অনেক আগের। তখন তিনি সবে কলেজ পড়ুয়া। সেই ২০০৬ সালে অনেকটা মজা করে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্দেশনায় ছোট্ট একটি চরিত্রের মাধ্যমে শার্প ব্লেডের টিভিসিতে মডেল হন। তখন উপস্থাপনা করার কথা স্বপ্নেও ভাবতেন না। হতে চাইতেন একজন নামকরা মডেল। তবে পরে উপস্থাপনাই তাঁকে সাফল্য এনে দেয়। আর দেরি করে হলেও মডেলিংয়েও তিনি সফল হয়েছেন। এ পর্যন্ত মডেল হয়েছেন শার্প ব্লেড, রবি স্বাধীনতা প্যাকেজ, বাংলালিংক থ্রিজি, ডাবর ভাটিকা হেয়ার অয়েল, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বডি ফেয়ারনেস ও মেরিল লিপজেলের টিভিসিতে। নাবিলার ক্যারিয়ারে এত টেলিভিশন কমার্শিয়াল দেখে স্বভাবতই জানতে ইচ্ছা করে মডেলিং নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা। তিনি বলেন, ‘একসময় মডেলিংয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ থাকলেও এখন উপস্থাপনা রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। এখন যতই ভালো বিজ্ঞাপন করি না কেন, সবাই কিন্তু বলে এটা উপস্থাপক নাবিলার বিজ্ঞাপন। আমি আসলে এটাই চেয়েছি। কখনো চাইনি মডেল, অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকাসহ নানা নামের আড়ালে আমার মূল কাজটাকে ঢেকে রাখতে। তাই তো ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির কাজ করার পর অনেক টিভিসির অফার পেলেও যেনতেন কাজ করিনি। যে কাজটা ইউনিক লেগেছে, সেটাই করেছি।’
এত বিজ্ঞাপনের সবই দর্শক সাড়া পেয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি নাবিলার প্রিয় এ বছরের শীতের জন্য মেরিল লিপজেলের টিভিসিটি। ‘আমি যা না তা-ই এখানে করেছি। টিভিসি শেষে এর পরিচালক ধ্রুব হাসানকে বলেছিলাম, আমি জীবনে এত ঢং করিনি, যা এই টিভিসির জন্য করলাম। তা ছাড়া বর্তমানে সারা বিশ্বে সেলফির যে হিড়িক, এই বিজ্ঞাপনের গল্প সেই বিষয়টি নিয়ে বলে আরো বেশি ভালো লেগেছে।’ বলছিলেন নাবিলা।
এত চমৎকার একটি বিজ্ঞাপন অথচ এটি বানাতে নাকি মাত্র এক দিন শুটিং করতে হয়েছে। তা ছাড়া এই টিভিসিতে নাবিলাকে যে গাড়ি ড্রাইভ করতে, সমুদ্রের পাড়ে হুল্লোড়ে মেতে উঠতে বা নির্জন পার্কে প্রেমিককে নিয়ে সেলফি তুলতে দেখা যায়, তার সবই নাকি গ্র্যাফিকসে করা। পুরো শুটিংটাই নাকি রাজধানীর কোক স্টুডিওতে হয়েছিল। ‘কাজটা অনেক তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছিল। কিন্তু বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। যেখানে গরমে ঘেমে যাচ্ছি, সেখানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে হচ্ছিল। আবার যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ড শুধু একটা নীল কাপড়ের, সেখানে ওটাকেই কখনো সমুদ্রপাড় আবার কখনো পার্কের রাস্তা মনে করে এক্সপ্রেশন দিতে হচ্ছিল। কিন্তু টিভিতে কাজটা দেখে খুব ভালো লেগেছে।’ মেরিল লিপজেলের টিভিসির অভিজ্ঞতা এভাবেই জানালেন নাবিলা।
বিজ্ঞাপনটির গল্পটা কি মনে করতে পারছেন পাঠক? যেখানে নাবিলা ফাটা ঠোঁটে সেলফি নিতে গেলে তাঁর শখের সেলফোনের স্ক্রিনটাই ফেটে যায়। পরে মেরিল লিপজেল ব্যবহারের পর নাবিলা রীতিমতো সেলফি কুইন বনে গেল। বন্ধুদের আড্ডা, ফেসবুকে এমনকি অপরিচিত অনেক হ্যান্ডসাম তরুণের মনের মধ্যমণি হয়ে গেলেন তিনি। চিরকুটের সংগীতায়োজনে এলিটার গাওয়া ‘বিফোর আই ক্লিক, আই ওয়ান্ট মাই প্রিটি লিপস’ গানের সঙ্গে নাবিলা তখন সেলফিতে মত্ত। তবে নাবিলা নিজেই শুধু তাঁর প্রিটি লিপস দিয়ে সবাইকে ভোলাননি, পরে যখন একটি ফাটা ঠোঁটের ছেলেকে তাঁর মনে ধরে, তখন তাঁকেও মেরিল লিপ কেয়ার গিফট করেন। আর একটা দৃশ্যে ফাটা ঠোঁটের ছেলেটি যখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, নাবিলা তখন বন্ধুদের নিয়ে ছেলেটিকে টিজ করে। একপর্যায়ে একটা ফ্লাইং কিস করে। এই দৃশ্যটি নাবিলার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত বলে জানালেন তিনি।
শুধু কী নিজের? অনেক টিন এজ ভক্তের সঙ্গে যখন নাবিলার দেখা হয়, তখন তাদের কেউ সেলফি কুইন আবার কেউ প্রিটি লিপস বলে ডাক দেয়। এমনও হয়েছে, ফ্লাইং কিস দিয়ে নাবিলাকে বলছে, ‘একটা সেলফি প্লিজ।’ এগুলো নাবিলাও খুব এনজয় করেন। এটা যে তাঁর কাজেরই স্বীকৃতি।