লাইফ স্টাইল

মন ভালো করতে ওর দিকে চেয়ে থাকতাম : আজরা মাহমুদ


শুভ সকাল ডেস্কঃ ছোটবেলায় আমি ফ্যাশন টিভি নিয়মিত দেখতাম। মডেলদের ক্যাটওয়াক দেখে অবাক হয়ে ভাবতাম, ওরা কি মানুষ? এত সুন্দর করে মানুষ হাঁটতে পারে? আস্তে আস্তে তাঁদের মুখভঙ্গি, পোশাক-আশাক- সব কিছু খেয়াল করতে থাকলাম। আমার ভেতরে তাঁরা বাসা বেঁধে ফেলল। হাই স্কুলে পড়ার সময় যতবারই আসাদগেট আড়ংয়ের সামনে দিয়ে যেতাম, ঠিক ততবারই একটি মেয়ের ছবি দেখতে পেতাম। এমনও হয়েছে, কোনো কারণে আমার মন খারাপ, আর মন ভালো করার জন্য আমি আড়ংয়ের সামনে এসে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি।

তত দিনে ‘এ’ লেভেল পাস করেছি। একদিন পত্রিকায় দেখলাম ‘মডেল আবশ্যক’। ভয় আর সংকোচ নিয়ে পত্রিকায় দেওয়া ঠিকানায় গেলাম। ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর দেখি দীর্ঘদেহী খুব সুন্দর একটি মেয়ে হেঁটে আসছে। আমার মনে হলো, মেয়েটি ফ্যাশন টিভি থেকে বেরিয়ে এলো। আমার কাছে এসে কিছু একটা জানতে চাইল। কিন্তু আমার কানে কিছুই পৌঁছল না। আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি- দেখছি কী সুন্দর করে কথা বলে সে। আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে তারই সামনে আমি দাঁড়িয়ে। এ সেই মেয়ে, আড়ংয়ে যার ছবি আমি রোজ দেখতাম। এই তো তুপা! আমার মডেলিংয়ের প্রেরণা, আমার শিক্ষক, আমার আইডল। আজ যে আমাকে কিছু মানুষ চেনে, ভালোবাসে তা এই তুপারই কারণে।

প্রথম দেখায়ই তুপা আমাকে বলেছিল, ‘তোমার হাইট আদর্শ মডেলদের থেকে কিছুটা কম, তা ছাড়া তুমি কালো। তোমাকে আমি শেখাতে পারি; কিন্তু কাজ দিতে পারব কি না জানি না।’ আমি এমনিতেও খুব জেদি। আর এই কথাগুলো শুনে আরো জিদ চাপল মনে। তুপাকে বললাম, ‘আমাকে শুধু শেখালেই হবে, কাজ না পেলেও সমস্যা নেই।’

তুপা সেদিন ওই কথাগুলো যদি আমাকে না বলত, তাহলে হয়তো আমি আজ এই পর্যায়ে থাকতাম না। তার চেয়ে যেটা বেশি ভালো লেগেছে তা হলো, তুপা আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিতে চায়নি। আমার দুর্বলতাগুলো প্রথমেই বলে দিয়েছে, যা ওভারকাম করার জন্য ক্যাটওয়াককেই আমি হাতিয়ার হিসেবে নিই। দীর্ঘ ছয় মাস দিনে ছয় ঘণ্টা করে ক্যাটওয়াক প্র্যাকটিস করতাম আমি।

অবশ্য আমার প্রথম কাজ তুপাই দিয়েছিল এবং সেটা ক্লায়েন্টের সঙ্গে অনেকটা ঝগড়া করে। আমি নিজেও এ বিষয়গুলো মেনে চলি। অযোগ্য কেউ মডেল হতে চাইলে প্রথমেই তার দুর্বলতাগুলো বলি এবং আজ পর্যন্ত কোনো মডেলকে বিনা পয়সায় পারফর্ম করাইনি। এটা আমাকে তুপাই শিখিয়েছিল। তা ছাড়া আজ যে আমি শো উপস্থাপনা করি, তাও তুপার প্রেরণায়। খুব কাছ থেকে আমি তুপার উপস্থাপনা দেখে ডায়ালগ থ্রো করা রপ্ত করি। সব মিলিয়ে বলতে হয়, এই একজীবনে পরিবারের মানুষের বাইরে তুপাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আবিষ্ট করেছে। আমি সব সময় তার শুভ কামনা করি।

লেখা : মাসিদ রণ। ছবি : শামছুল হক রিপন