ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার সম্পর্কে পূর্ব কোন ধারনা পাওয়া যায় না। কিন্তু ধ্বংস করে দেয় সব কিছু। তাই ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা যায় না। তবে পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে এর ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। তাছাড়া ভূমিকম্পের সময় কি করতে হলে তা জানা থাকলে হয়ত এই সময় এই বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ভূমিকম্প হলে সর্ব প্রথম যেটা করণীয় সেটা হল-মাথা ঠাণ্ডা রাখা, স্থির থাকা, উত্তেজিত না হওয়া।
ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির সাথে-সাথে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খোলা স্থানে আশ্রয় নিন। যদি ঘর থেকে বের হতে না পারেন তবে কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোন শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নীচে ঢুকে আশ্রয় নিন।
এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে আশ্রয় নিন যেন প্রয়োজনে স্থান বদল করতে পারেন। ভূমিকম্পের সময় বড় কোন সোফা বা বড় কোন কিছুর পাশে আশ্রয় নিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কুণ্ডলী করে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়ুন। ইটের গাঁথুনির পাকা ঘর হলে- ঘরের কোনায়, কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে- কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিন।
রাতের বেলা ঘুমানোর সময় ভূমিকম্প হলে কোন হুড়াহুড়ি করার দরকার নেই। গড়িয়ে মেঝেতে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পড়ুন বিছানাকে ঢাল বানিয়ে। তার মানে আবার বিছানার নীচে যেন ঢুকবেন না, বিছানার পাশে আশ্রয় নিন। তেমনি ভূমিকম্পের সময় জানালা বা বারান্দা দিয়ে লাফ দেয়ার চেষ্টা করবেন না।
চেষ্টা করুন বাসার একেবারে ভিতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে। বিল্ডিং-এর ভেতরের দিকে থাকলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার পর আপনার উদ্ধার পাবার রাস্তা বন্ধ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি থাকলে ব্লক কম থাকবে, তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে।
যতদ্রুত সম্ভব ইউটিলিটি লাইনগুলোর (গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) বন্ধ করে দিন।
কোন ভাবেই লিফট ব্যাবহার করবেন না। কারণ ভূমিকম্পের পর পরই আবারও কম্পন হতে পারে, যা ‘আফটার শক’ বা পরাঘাত। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটতে পারে। তখন লিফট হয়ে উঠবে মরণফাঁদ। সিঁড়ি ব্যবহার করুন বেরিয়ে আসতে। কিন্তু ভুল করেও সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। ভবন ধসে পড়লে সবার আগে সিঁড়ি ধসে পড়ার শঙ্কাই বেশি।
তাড়াহুড়ো করবেন না। যথাসম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমিকম্পের কারণে মানুষের মনে দেখা দেওয়া আতঙ্ক থেকে হুট করে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া, তাড়াহুড়ো করতে দিয়ে পদপিষ্ট করায় আহত ও নিহতের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য।
আধা পাকা বা টিন দিয়ে তৈরি ঘর থেকে বের হতে না পারলে শক্ত খাট বা চৌকির নিচে আশ্রয় নিন। গাড়িতে থাকলে যথাসম্ভব নিরাপদ স্থানে থাকুন। আশপাশে বড় ভবন নেই এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করতে পারেন। কখনো সেতুর ওপর গাড়ি থামাবেন না।
যদি ভবন ধসে আটকাও পড়েন, বেরিয়ে আসার কোনো পথ খুঁজে না পান, আশা হারাবেন না। সাহস রাখুন। সাহস আর আশাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। উদ্ধারকারী পর্যন্ত আপনার চিৎকার বা সংকেত পৌঁছানো যায় কী করে, ভাবতে থাকুন।
-এটিএন টাইমস অবলম্বনে