১০ বছরের বাচ্চাও নাকি বেনজিরের ভক্ত। তালিকায় রয়েছে ৫০ বছর বয়সী অনেকেই। নিজের এলাকা মিরপুর-২ নম্বর দিয়ে যাতায়াত করার সময় ১০-১২ বছরের ছেলেমেয়েরাও তাঁকে ডাকে ‘আমার চুমুক’ বলে। এটি হচ্ছে বেনজিরের করা বর্তমানে প্রচার চলতি ‘ট্যাংগো জুস’-এর টিভিসির ডায়ালগ। দুষ্টু তরুণরা একটু মজা করে বলে, ‘আমার চুমু’। শেষের ‘ক’ বর্ণটিকে সাইলেন্ট রেখে বেনজিরকে খেপায়।
খেপে যান? জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, ‘একেবারেই না। মনে মনে বেশ খুশি হই।’ লোকে বোঝে, আপনি যে খেপেন না? ‘তা তো আমার হাসির ধরন দেখে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা বুঝতে পারে।’
টিভিসিতে আসার আগে র্যাম্পে হাঁটতেন তিনি। কলেজের গণ্ডি পেরোনোর আগেই হেঁটেছিলেন। আবার ছোটবেলা থেকে বাকপটু। ভাবলেন, হাঁটার পাশাপাশি কিভাবে এই প্রতিভাও কাজে লাগানো যায়। তাই জড়ালেন উপস্থাপনায়। সেখানেই তিনি অধিক সফল। তবে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে অত্যধিক সফল- জোর দিয়ে দাবি করলেন বেনজির ইসরাত আঁখি।
বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পোশাক গায়ে চড়িয়ে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ড হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দিনগুলোতেই তাঁর এক পরিচিত ফটোগ্রাফার একদিন বললেন, ‘একটা ভালো টিভিসির প্রস্তাব পেয়েছি। তুমি করতে পারবে?’
বেনজির তেমন কিছু না ভেবে হ্যাঁ বলে দিলেন। এটি ছিল ২০০৯ সালে ‘কেইন’ নামের একটি চিপসের টিভিসি। সেই তাঁর শুরু। এরপর মায়ের কথামতো কলেজের চৌহদ্দি পেরিয়ে বিবিএতে নিজেকে একটু গুছিয়ে ফিরলেন ২০১৩ সালে।
‘২০১৩! অনেকেই আনলাকি থার্টিন বললেও আমার জীবনে এর থেকে ভালো বছর আর আসেনি। একটি বছর বলছি কেন, এক মাসেই তো ঘটে গেল সব ঘটনা। সেটি সেপ্টেম্বর। এ মাসের ৯ তারিখে আমার জন্মদিন। আর জন্মদিনের উপহার হিসেবে যেন ওই মাসেই একাধারে চারটি টিভিসির প্রস্তাব পাই। আর সবই করি ওই মাসে। তাতেই আমার পরিচিতি বেড়ে যায় বহুগুণ।’
বেনজির ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে যে টিভিসিগুলো করেন, সেগুলো উল্লেখ করলে এতক্ষণ যাঁরা তাঁকে চিনতে পারেননি তাঁদের অনেকেই চিনতে শুরু করবেন। টিভিসিগুলো হলো- বাংলালিংক প্লে, ক্লেমন, প্রাণ-আরএফএল ও ইস্পাহানি মির্জাপুর চা। সবগুলোতেই ছিল তাঁর একক বা সহমডেলদের সঙ্গে উপস্থিতি। এর মধ্যে বাংলালিংকের মডেল হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেন বেনজির। তবে কাজটি নাকি তিনি আশাই করেননি।
‘একদিন আমাকে বাংলালিংক থেকে ফটোশুটের জন্য ডাকা হলো। আমি ভাবলাম, ওরা স্ক্রিন টেস্ট নেবে। তাই বললাম, না, আমার সময় হবে না। তবে লোকটি বললেন, কোনো চিন্তা করবেন না, এখানে তিন জোড়া ছেলেমেয়ে থাকবে, আপনি অবশ্যই ফোকাসড হবেন। তখন রাজি হয়ে স্টিল ফটোসেশনে অংশ নিই, ব্যস এটুকুই। কিন্তু কিছুদিন পর বাংলালিংক থেকে আবারও ফোন দিয়ে জানানো হলো, আমি তাদের প্লে ক্যাম্পেইনের টিভিসির জন্য সিলেক্ট হয়েছি। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। কাজটি নিয়ে অনেক এক্সাইটেড ছিলাম।’ বললেন বেনজির।
এই টিভিসিতে দেখা যায়, বেকার ছেলের সঙ্গে মিশছে বলে বেনজিরের বাবা তাঁকে বকছে। ছেলের স্টেটাসই নেই। তখন ছেলেটি বলে, ‘আমার তো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, স্টেটাসও আছে। ভালো লাইক-কমেন্টও পাই, তাহলে কেন আমি আপনার মেয়েকে পাব না।’
এই টিভিসির গল্প যেমন ফানি, ঠিক তার পরের কাজেই বেনজির এক মফস্বল শহরের লাজুক মেয়ে। প্রেমিক ঢাকায় চাকরি করে। আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম দফায় বাবা-মাকে নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। আর বেনজিরকে ইস্পাহানি চা দিয়ে মন ভুলিয়ে বলছে, এর পরেরবার কিন্তু তোমাকেও নিয়ে যাব।
কাজটি করতে গিয়ে এক মর্মান্তিক ঘটনার মুখোমুখি হন বেনজির। শুটিং হয়েছিল গাজীপুরের এক রেলস্টেশনে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ভোরে পৌঁছেন সেখানে। রোদ উঠতেই বেনজির রেললাইনের ধারে কী যেন পড়ে থাকতে দেখেন। তবে বুঝতে পারছিলেন না কী। পরে একজন তাঁকে বলে, গত রাতেই এখানে ওই লোকটা ট্রেনে কাটা পড়েছে। বেওয়ারিশ লাশ। আর এটিই কাজে দেয় টিভিসির চরিত্রে ঢুকতে। প্রেমিককে দূরে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো বিষণ্ন ব্যাপারটা তিনি সহজেই চেহারায় ধারণ করতে পেরেছিলেন বলে জানালেন। ট্রেনে কাটা পড়া লাশ দেখে বেনজির ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। এমনিতেই মন খারাপ ছিল।
মূলত বেনজিরের এই ভিন্নধর্মী চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্যই তাঁর ভক্তের সংখ্যা খুব দ্রুত বেড়ে যায়। শুধু চরিত্রের ভিন্নতাই নয়, বেনজিরের আরেকটি বিশেষ গুণ রয়েছে। অনেকের মধ্যে নিজেকে স্বকীয় করে তোলা। ‘এটা হয়তো আমার উচ্চতা বা ব্যতিক্রমী লুকের কারণে। ক্লেমনের টিভিসি করার সময় অনেক কাছের মানুষ আমাকে বলেছে, এত ছোট চরিত্রে কেন তুমি কাজ করেছ। কিন্তু আমি শতভাগ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। টিভিসি প্রচার হতেই দেখা গেল, আমার অংশটিই বেশি সাড়া ফেলেছে।’
এই টিভিসিগুলো ছাড়া তিনি করেছেন সজীব নুডলসের একটি টিভিসি। এটি সামনেই প্রচার হবে। বর্তমানে আরো প্রচার হচ্ছে তাঁর অভিনীত ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’-এর একটি টিভিসি। এই কাজটিও বেনজিরকে আবেগতাড়িত করেছে। এখানে তিনি একটি হেলমেট মাথায় দিয়ে অভিনয় করেছেন। হেলমেট টি সত্যিই একজন মুক্তিযোদ্ধার। এ কথা জানার পর কেন যেন তাঁর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরেছে। সেই অভিব্যক্তিই টিভিসিতে উঠে এসেছে সূক্ষ্মভাবে। এ কাজটি দিয়ে তিনি মধ্যবয়সী অনেক ভক্ত জুটিয়ে ফেলেছেন।
বিজ্ঞাপনে এতো সব সাফল্যের কারণে উপস্থাপনা নিয়ে হাজার ব্যস্ততা থাকলেও টিভিসিতে নিয়মিত কাজ করতে চান চাঁদপুরের এই মেয়ে।
[metaslider id=3280]
You must be logged in to post a comment.