Uncategorized

ঘুরে আসুন গজনী অবকাশে


গারো পাহাড়ের পাদদেশে সীমান্তবর্তী গজনী অবকাশ। সারি সারি শাল, গজারী , সেগুন ও লতাগুলোর বিন্যাস প্রকৃতি প্রেমীদের  দুলা দিয়ে যাবে নিশ্চিত। শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমন পিয়াসুরা দল বেঁধে ভীড় করে ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গজনীতে। নৈস্বর্গীক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ গারো পাহাড়। এখানকার সবুজ প্রকৃতি মূহুর্তেও মধ্যে আপন করে নেয়। শ্যামল বৃক্ষরাজীর মাঝ দিয়ে পাকা সড়ক পথ যেন সুড়ঙ্গের দিকে ঢুকে যাচ্ছে।  ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গাজনীর সৌন্দযের মুগদ্ধ হয়ে ভ্রমন পিয়াসুরা বার বার ছুটে আসেন এখানে । পাহাড়ী ঝর্ণা ও ছড়ার স্বচ্ছ জল হৃদয়ে তুলবে আনন্দের হিলে¬াল। পাহাড়, বনানী, ঝর্ণা এত্তোসব প্রাকৃতিক সৌন্দযের মধ্যো কৃত্রিম অনেক সৌন্দযের সংযোজন রয়েছে এখানে । যার একথায় পরিচিতি “গজনী অবকাশ পিকনিক ও পর্যটন কেন্দ্র ”নামে । দিনবদলের সংঙ্গে সংঙ্গে গাজনীর আদি নাম পরিবর্তন হয়ে গজনী হয়েছে। যেখানে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ ছুটে আসেন। কাজের ফাকে কিংবা অবসরে পরিবারের লোকজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলে আসুন প্রকৃতির সান্নিধ্যে।  পাহাড়ী ঝর্ণার ঝিরঝির শব্দ আর পাখির কলকাকলি গারো পাহাড়ের বিশেষ আর্কষন । শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি।এখানে এসে সবাই আনন্দ ধারায় হারিয়ে যান। পুরোদিনের জন্য স্মৃতি পটে আঁশ হয়ে যায় একটি সোনালী সুন্দর রঙ্গিন দিনের। মিতালী হয়ে যায়, পাহাড়ী গাছ-গাছালী ও পশু পাখির সংগে। পড়ন্ত বিকেলে গজনী অবকাশ কেন্দ্র থেকে উত্তরে তাকালে তুরা পাহাড় স্পট দেখা যায়। মনে হবে, তুরা পাহাড় যেন, হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মনের মাঝে জাল বুনবে হায়? জন্ম যদি হতো এ গারো পাহাড়ে? তাই আবারও মন আকুলি-ব্যাকুলি করবে গারো পাহাড়ে আসার জন্যে ।

কোথায় অবস্থান
শেরপুর জেলার বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি । ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ। লালমাটির উচু পাহাড়,টিলা, পাহাড়ী টিলার মাঝে সমতল ভূমি। দুই পাহাড়ের মাঝে পাহাড়ী ঝর্ণা ছন্দ তুলে এগিয়ে চলছে। ঝর্ণার পানি এসে ফুলেফেঁপে উঠছে। সেখানে বাধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। লেকের মাঝে কৃত্রিম পাহাড় এবং পাহাড়ের উপর “লেক ভিউপেন্টাগন”। সেখানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে দোদ্দুল্যমান ব্রীজ।  পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক সুবিধাসহ আধুনিক “দুতলা রেষ্ট হাউজ”। যে রেষ্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য আঁকা-বাকা ৩শতাধিক ধাপবিশিষ্ট রয়েছে “পদ্মাসিড়ি” । পদদেশে সান বাঁধানো বেদীসহ বট চত্বর। সেখানে সুপরিশর গাড়ী পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থাসহ পিকনিক দলগুলোর আড্ডায় মেতে উঠা এবং রয়েছে খেলা-ধূলারও প্রচুর জায়গা । বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের জন্য বেশ ক’টি নলকূপ এবং নামাজের জন্য মসজিদ, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা ও রান্না-বান্নার ব্যবস্থাও রয়েছে।

কি ভাবে যাবেন
এখানে আসার জন্য সড়ক পথে যাতায়ত খুব সহজ। গজনী অবকাশ পর্যন্ত রয়েছে মসৃণ পীচঢালা পথ। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াতই সবচেয়ে উত্তম। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়ক পথে। শেরপুর শহর থেকে গজনীর দুরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রো বাস অথবা প্রাইভেটকারে গজনী অবকাশ যেতে পারেন। ঢাকা থেকে নিজস্ব্য বাহনে মাত্র সাড়েতিন থেকে চার ঘন্টায় ঝিনাইগাতীর গজনীতে আসা যায়। এ ছাড়া ঢাকার মহাখালি থেকে স্পেশাল ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর আসা যায়। ভাড়া মাত্র ৩০০-৩৫০ টাকা। ভূল করে আনন্দ গেটলক বা লোকাল ড্রিমল্যান্ডে উঠবেন না। কারণ এসব গাড়ী সারা রাস্তায় থেমে থেমে যাত্রী উঠানামা করে এবং সময়ও লাগে অনেক বেশী। ড্রিমল্যান্ড স্পেশাল গাড়ীতে উঠবেন এসব গাড়ী গেইট লক। আবার মহাখালী থেকে দুপুর ২টায় ছাড়ে এসিবাস। ভাড়া ৪-৫শত টাকা। শেরপুর নেমে নিউমার্কেট থেকে ভাড়ায় মাইক্রোবাস  ৫শত থেকে ১হাজার টাকায় সোজা গজনী যাতায়াত করা যায়। শেরপুর থেকে লোকাল বাসে অথবা সিএনজিতে ঝিনাইগাতী আবার ঝিনাইগাতী থেকে সিএনজি অথবা অটোরিক্সায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যাওয়া যায়। শেরপুর শহরে রাতযাপনের জন্য ৫০ থেকে ৫শত টাকায় গেষ্ট হাউজ রোম ভাড়া পাওয়া যায়। শহরের রঘুনাথ বাজারে হোটেল সম্পদ, বুলবুল সড়কে কাকলী ও বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, নয়ানী বাজারে ভবানী প্লাজা সহ আধুনিক মানের থাকার হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারেন সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, পল¬ী বিদ্যুৎ কিংবা এটিআই রেষ্ট হাউজে।  ঝিনাইগাতী ডাকবাংলো অথবা বন-বিভাগ ডাকবাংলোতেও থাকতে পারবেন। তবে থাকা-খাওয়ার জন্য ঝিনাইগাতী সদর অথবা শেরপুর শহরে চলে আসাই উত্তম। আর ভাল মানের খাবার পাবেন ঝিনাইগাতীর হোটেল সাঈদে, শেরপুর শহরের নিউ মার্কেটে হোটেল আলিশান হোটেল শাহজাহান, হোটেল আহার কিংবা কাকলী মার্কেটের হোটেল প্রিন্সে। এসব হোটেল অগ্রিম বোকিং ও অর্ডার সরবরাহ করা হয়।

কি কি দেখবেন
ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে ক্রিন্সেন্ট লেক, লেকের ওপর রংধনু ব্রীজ, কৃত্রিম জলপ্রপাত, পানসিতরী নৌকা, প্যান্ডেল বোড (বর্তমানে লেক খনন করে আরও সৌদর্য্য বাড়ানোর কাজ চলছে), মুক্তিযোদ্ধ স্মুতিসৌধ, শিশু পার্ক, কবি নজরুল ইসলাম ও কবি রবিন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্মৃতিসৌধ, মাটির নিচে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়তের জন্য ড্রাগন ট্যানেল মুখের ভিতর দিয়ে পাতালপুরি, লাভলেইন, মৎস্য কুমারী, কবিতাবাগ, হাতি, বাঘ, জিরাফ, হরিণ, ডাইনোসরের প্রতিকৃতি। অবকাশ কেন্দ্রে অন্যতম আকর্ষণ “সাইট ভিউ টাওয়ার”। ৮০বর্গফুট উচ্চ এ টাওয়ারে উঠলে দেখা যাবে পাহাড়ী ঢিলার অপরূপ বৈচিত্রময় দৃশ্য।  বন বিভাগ প্রকৃতির সংগে মানুষের সখ্য গড়ে তুলতে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে একটি ক্যাকটাস পল্লী এবং মিনি চিড়িয়াখানাও গড়ে তুলেছে।  বর্তমানে শেরপুর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে গজনীতে শিশু পার্কের শিশু বিনোদনের জন্য পুতুল নাচসহ নাগরদোলা ও বিভিন্ন ধরনের বিনোদন মূলক দৃশ্য রয়েছে।  প্রাকৃতিক সম্পদ আর
সৌন্দর্য্যে ভরপুর গারো পাহাড়ের গজনীতে পর্যটক বা ভ্রমন পিয়াসুদের বারতি পাওনা হলো আদিবাসী সম্প্রদায় গারো, কোচ, হাজং, বানাই, হদীসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর চাষাবাদ, জীবন প্রবাহ, কৃষ্টি,কালচার,শিল্প এবং ভাষা ও সংস্কৃতি। এ জন্যই প্রতিদিন পর্যটক ও ভ্রমন পিয়াসুদের ঢল নামে গজনীতে । গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রেষ্ট হাউজ রোম ব্যবহার করতে চাইলে (কেবল দিনের বেলার জন্য ) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত শাখা থেকে অনুমতি ও বুকিং নিতে হয়। প্রতি কক্ষের জন্য ভাড়া ৫শত টাকা। নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে “ পবিত্র গজনী কুন্ড”। মাধব কুন্ডের আদলে তৈরি হচ্ছে এটি।

প্রবেশ ফি
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে  গাড়ী প্রবেশের জন্য উপজেলা পরিষদের সন্মুখের চেকপোষ্ট থেকে বাস-কোচ, ট্রাক-৪ শত টাকা, মাইক্রোবাস, পিক-আপ, মেক্সি-২শত টাকা, জিপ,কার,টেম্পু-১শত ৫০টাকা, সিএনজি-৫০টাকা দিয়ে গেটপাসের জন্য টিকেট নিতে হবে।  অন্যথায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ী ঢুকাতে পারবেন না। তা ছাড়া সীমন্ত পথে বিজিবি নকশী ক্যাম্পে সেই টিকেট দেখাতে হবে। আর অবকাশ কেন্দ্রে টাওয়ারের জন্য জন প্রতি ১০ টাকা, শিশু পার্কের জন্য প্রবেশ ফি-১০টাকা, চেইন ট্রেন-১৫ টাকা, নাগর দোলা-১৫ টাকা, প্যাডেল বোড ৩০মিনিটে ৪জনে -৬০টাকা, পানসিতরী নৌকায় জন প্রতি-৩০টাকা এবং পাতালপুরি ড্রাগন ট্যানেলে জন প্রতি-১০টাকা প্রদর্শনী ফি রয়েছে।

কোথায় যোগাযোগ করবেন
একটি কথা ভূলবেন না, গজনী অবকাশ ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন। সীমান্তের দিকে না যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।  অন্যথায় বিপদ ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। শেরপুর জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখা “(ফোন)
০৯৩১-৬১২৮৩/০৯৩১-৬১৯৫৪/০৯৩১-৬১৯০০, সার্কিট হাউজ
০৯৩১-৬১২৪৫ (হোটেল সম্পদ) ,০১৭১২৪২২১৪৫( হোটেল সাইদ)
০৯৩১-৬১৭৭৬ (কাকলী গেষ্ট হাউজ), ০১৯১৪৮৫৪৪৫০( টিকেট কাউ্ন্টার চেকপোষ্ট), ০৯৩১-৬১২০৬/০৯৩২-২৭৪৪০০১(ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার)

-বাংলারচোখ.কম অবলম্বনে