আন্তর্জাতিক

গাজা চিড়িয়াখানার হতভাগ্য প্রাণীরা


ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা, যেখানে মানুষেরই জীবনেরই এক মুহূর্তের মূল্য নেই, সেখানে বন্য প্রাণীর জীবনের কথা কে খেয়াল রাখে। হয়েছেও তাই, গত কয়েক বছরে সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শুধু মানুষ নয়, চিড়িয়াখানায় খাবার ও জলের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরেছে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী। যুদ্ধের সেই ডামাডোলে কেউ খোঁজও রাখেনি তাদের।

অথচ এই বন্যপ্রাণীরাই গাজা উপত্যকার খান ইউনুসে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া সাউথ ফরেস্ট পার্ক নামের চিড়িয়াখানাটি ছিলো অবরুদ্ধ নগরীর বাসিন্দাদের চিত্তবিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী মাঝে মাঝেই যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে তাতে চিড়িয়াখানাটির ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী যে স্থল অভিযান চালিয়েছিল সেসময়ই মারা যায় অনেক প্রাণী। সবশেষ গত বছর জুলাই-অাগস্ট মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় চিড়িয়াখানাটি। অাশ্চর্যের বিষয় হলো এখনো চিড়িয়াখানাটির বিভিন্ন খাচায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অাছে বিভিন্ন পশু-পাখির মৃতদেহ। কোনও কোনওটি অাবার রূপ নিয়ে কঙ্কালে।

অবশ্য চিড়িয়াখানাটির পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াইদা বহু চেষ্টা করেছেন পশু-পাখিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু মানুষই যেখানে চরম নিষ্ঠুরতা শিকার, সেখানে বোবা প্রাণীগুলোর জন্য কেউ মায়া দেখায়নি।

মোহাম্মদ ওয়াইদা বলছেন, চিড়িয়াখানার অাজকের এই অবস্থার জন্য দায়ী ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধ। অবস্থাটা এমন যে, পশু-পাখিগুলোর ভরনপোষন তার পক্ষে এখন অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। অার এই ভেবেই তিনি যুদ্ধের মধ্যে নিয়েছিলেন ব্যতিক্রমী এক প্রতিবাদী উদ্যোগ। কারণ ওই যুদ্ধে সময় সেখানে দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে মারা গেছে বাঘ, সিংহ, কুমির, বানরসহ নানা প্রাণী।

খাবার ও পানি না পেয়ে ধুকে ধুকে মরা এসব প্রাণীর মৃতদেহ ওয়াইদা সংরক্ষণ করে স্মৃতি হিসেবে রেখে অাসতেন যার যার নির্দিষ্ট খাঁচাতেই। যাতে যুদ্ধ শেষে যারা বেড়াতে অাসবে এই চিড়িয়াখানায় তারা যেন দেখে বুঝতে পারে কতো কষ্ট পেয়ে মরেছে প্রাণীগুলো।

ওয়াইদা জানান, বর্তমানে এই চিড়িয়াখানায় তার নিজের হাতে মমি করা ১০ প্রাণীর মৃতদেহ রয়েছে। ইন্টারনেট থেকে নিজের উদ্যোগেই তিনি শিখেছেন প্রাণীদের মৃতদেহ মমি বানানোর পদ্ধতি।

উল্লেখ্য, খান ইউনুসের মোট ১০ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জন্য সাউথ ফরেস্ট পার্ক ছাড়াও অারও ৪টি চিড়িয়াখানা রয়েছে। তবে বাকিগুলোর অবস্থাও প্রায় একইরকম। সূত্র: মিরর অনলাইন