আই জাস্ট লাভ অ্যাডভার্টাইজিং
আদনান আল রাজীব। জনপ্রিয় এই বিজ্ঞাপন নির্মাতার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
বিজ্ঞাপন নির্মাণে আসার ইচ্ছা কি ছোটবেলা থেকেই ছিল?
না, একদমই না। ক্লাসে ফার্স্টবয় থাকার কারণে হাজারটা ছেলের মতো আমারও ইচ্ছা ছিল পাইলট হওয়ার।
আপনার নির্মিত প্রথম বিজ্ঞাপন কোনটি?
আমার প্রথম বিজ্ঞাপন এভারেস্ট হোল্ডিংসের। ২০০৯ সালের কথা। তবে ২০০৩ সাল থেকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করি।
বিজ্ঞাপনে কিভাবে?
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে ধারাবাহিক ও এক ঘণ্টার নাটকগুলোতে কাজ করেছি। একবার গ্রামীণফোনের ‘মা’ বিজ্ঞাপনের কাজটা দেখলাম। অল্প সময়ে অনেক পরিকল্পনা করে কাজ হয় এখানে। একই সঙ্গে মার্কেটিং ও মানুষের চিন্তাভাবনা সম্পর্কেও জানা যায়। তখন মনে হলো, এই মাধ্যম অনেক মজার। ফিল্মমেকার হিসেবে এই মাধ্যমে কাজ দেখানো ও শেখার জায়গা বেশি।
এ পর্যন্ত কতটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন?
আমি প্রায় ছয় বছর ধরে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করছি। এই সময়ে মোট ৮০ থেকে ১০০টি টিভিসি বানিয়েছি। প্রথম দিকে অনেক কাজ করলেও এখন মাসে দুটির বেশি টিভিসি বানাই না।
আপনার নির্মিত দর্শকনন্দিত বিজ্ঞাপন কোনগুলো?
দর্শকনন্দিত বিজ্ঞাপনের সংখ্যা তো অনেক। গত দুই মাসে রবির ‘ফুরিয়ে যায়’, ‘বন্ধু গ্যারেজ’, গ্রামীণফোনের বিদ্যা সিনহা মিমের (ডাবল রোল) অনেকেই পছন্দ করেছেন। এ ছাড়া ‘আমি আর ময়না’, ‘ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প’, ‘গ্রামীণফোন থ্রিজি’, ‘বাংলালিংক থ্রিজি কুংফু’, গ্রামীণফোনের ‘বাঁশে তেল মাখানো বন্ধ করো’, রবির ‘ট্রেন’, ‘দেশপ্রেমিক’সহ আরো অনেক।
ছোটবেলায় বিটিভিতে দেখা আপনার প্রিয় বিজ্ঞাপন কোনগুলো?
মেরিল ফ্রেশজেল। আফজাল হোসেনের। তখনকার সবচেয়ে আধুনিক বিজ্ঞাপন এটি।
বিজ্ঞাপন নির্মাণ নিয়ে মজার কোনো ঘটনা?
গ্রামীণফোনের একটা বিজ্ঞাপনের জন্য গাউসুল আলম শাওন যখন আমাকে ডেকে মিমের ডাবল রোলের কাজটির স্ক্রিপ্ট হাতে দিল, তখন অনেক এক্সাইটেড ছিলাম। পরিকল্পনা করলাম সিলেটে শুট করতে হবে। আর মিমের লুক টেস্ট করলাম, যাতে দুটি চরিত্রে তাকে আলাদা মনে হয়। বিজ্ঞাপনে চরিত্র দু’টি যমজ বোন। একজন খুব চালাক, অন্যজন খুব সরল। ক্যামেরা নিলাম ‘অ্যালেক্সা আমিরা’ ও ডিওপি নিলাম কামরুল হাসান খসরুকে। মনে হচ্ছিল, তিনিই একমাত্র রাতের বেলায় মিমের সৌন্দর্য সঠিকভাবে বের করে আনতে পারবেন। কিন্তু লোকেশন পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে বিশাল এলাকার পুরো একটা রিসোর্ট ভাড়া নিতে হয়েছিল। আমার বিজ্ঞাপনের এক্সিকিউটিভ প্রযোজক তারেক রহমান অনেক কষ্ট করে তা ম্যানেজ করলেন। এরপর শুটিং শুরু হলো, শুটের প্রথম দিন ভালো, কিন্তু দ্বিতীয় দিনে জেনারেটর স্টার্ট হচ্ছিল না। এমনিতেই রাতে শুট, তাই অল্প সময় শুট করতে হতো প্রতিদিন, আর এর মধ্যে জেনারেটর নষ্ট। অনেকক্ষণ বসে থাকতে হচ্ছিল। একসময় ভাবলাম, প্যাকআপ করে দিই, কারণ চার ঘণ্টা বয়ে গেল, জেনারেটর ঠিক করা যাচ্ছে না। মেকানিকও পারছে না। কিন্তু খসরু ভাই একসময় নিজের মতো করে ক্যালকুলেট করে লাইনস পরিবর্তন করে জেনারেটর চালু করেই ছাড়লেন। ভাগ্যিস খসরু ভাইর ক্যামেরা নষ্ট হয়নি। হলে হয়তো জেনারেটরওয়ালাকে আনতে হতো তার ক্যামেরা ঠিক করতে!
আপনার বেশির ভাগ ক্লায়েন্ট কারা?
আমি আসলে মূল ধারার বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা। তাই আমার ক্লায়েন্ট এখন সবাই। মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, ইউনিলিভার, আকিজ, স্কয়ারসহ অনেকে।
বিজ্ঞাপনে ‘ইমোশন’ ও ‘হিউমার’ দুটি বিষয় নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
সাব কন্টিনেন্টে আমরা ইমোশনাল ও হিউমারাস জিনিস পছন্দ করি। হিউমার সঠিকভাবে ডিল করতে পারলে লাভ বেশি। আর ইমোশনাল কিছু করলে সেটি লংটাইম মানুষের মনে গেঁথে থাকে। তবে সেটির সময় বেশি হতে হয়, কারণ মানুষের ইমোশনাল জার্নির মুড আনতে সময় লাগে।
বিজ্ঞাপন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
বিজ্ঞাপন করেই যেতে চাই, আই জাস্ট লাভ অ্যাডভার্টাইজিং। এর কোনো শেষ দেখতে চাই না। এ জন্য এখনো নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেটেড রাখার চেষ্টা করি। বিজ্ঞাপন বিভাগ ফিল্মমেকিংয়ের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে টক্কর দিয়ে ভালো কাজ করার চেষ্টা চলছে এবং ভালো কাজ হচ্ছেও।
আপনার বিজ্ঞাপনে কাজ করে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন কারা?
অনেকেই পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন তৌসিফ মাহবুব, সিয়াম, সাফা কবীর, সাবিলা নূরসহ বেশ কয়েকজন।
সিলন টির টিভিসিতে মডেল হয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, নিজের মডেলিংয়ের খবর কী?
এখন আর নিজেকে মডেল ভাবতে ভালো লাগে না। তাই ওদিকে যাওয়ার ইচ্ছা আর নেই।