২০১৪ সালে তারকা খেতাব জুটলেও নিজেকে আলাদাভাবে চেনাতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বছরখানেক। প্রথমদিকে নাটক করেছেন, কিন্তু সেগুলো মানুষের মুখে মুখে থাকার মতো হয়নি। তাই ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলেন নিলা। এ বছরের শুরুর দিকে তাঁকে দেখা যায় সেভেন আপের বিজ্ঞাপনে। লাক্স সুপারস্টার ছিলেন বলেই এই সুযোগ, তা কিন্তু নয়! প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে। মিডিয়ার বেশ কজন জনপ্রিয় মডেলের সঙ্গেই অডিশন দিয়ে তিনি নির্বাচিত হন। কর্তৃপক্ষ চাইছিল নতুন কোনো মুখ নিয়ে কাজ করতে। নিলা যেহেতু সেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাননি তাই তাঁকেই নেওয়া হয়। নিলা নিজেও স্বীকার করলেন। ‘যখন লাক্সের ক্যাম্পেইনে ছিলাম, তখন প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের লাক্সের বিজ্ঞাপন করতে হয়। সেটি বানিয়েছিলেন গাজী শুভ্র। ওই টিভিসি থেকে বিচারক ও পরিচালকের অনেক প্রশংসা পেয়েছিলাম। তাই মনের মধ্যে টিভিসি করার প্রবল আগ্রহ ছিল। কিন্তু হুট করে তো আর ভালো কিছু পাওয়া যায় না। তাই অপেক্ষায় ছিলাম বড় কিছুর। তাই হলো। প্রথমেই সেভেন আপের মতো ব্র্যান্ড, সেইসঙ্গে অমিতাভ রেজার মতো নির্দেশকের সঙ্গে কাজ করা, ভাবতেই খুব ভালো লাগে।’
যে টিভিসি নিয়ে এত কথা, সেটার কাহিনী তো একটু বলতেই হয়। এতে নিলাকে দেখা যায় দেশবাসীকে রিফ্রেস থাকার বার্তা পৌঁছাতে। একটি পার্কে বসে আছেন নিলা। বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। আনমনে মেয়েটি তখনই ব্যাগ থেকে বের করলেন সেভেন আপ। বোতল শেষ করতে না করতেই তাঁর কাছে উড়ে আসল একঝাঁক রং-বেরঙের বেলুন। মন ভালো হয়ে গেল।
তিনি বেলুনে ‘রিফ্রেশড থাকো’ লিখে আবারও উড়িয়ে দিলেন। আর এই ব্যতিক্রম কিছু পেয়ে দর্শকও মিষ্টি হাসির এই মডেলকে খুব আপন করে নিয়েছে।
ইদানীং বিভিন্ন টিভিসি বা নাটকে প্রেমিকাদের শুধু ঝগড়াটে স্বভাবেরই দেখানো হয়। যেখানে কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও বয়ফ্রেন্ডকে পীড়া দেয় গার্লফ্রেন্ড, সেখানে নিলা বয়ফ্রেন্ডের দেরি করে আসার পরও মন খারাপ করেন না। বরং সবাইকে শিখিয়ে দেন কিভাবে বোরিং সময়েও রিফ্রেশ থাকা যায়।
তবে কাজটি করতে গিয়ে অনেক কষ্ট হয়েছে।
নিলা বলেন, ‘বিজ্ঞাপনের মতো নাটকে তো এত বড় আয়োজনে কাজ হয় না। তাই প্রথম টিভিসিতে পুরোদমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। প্রথম শট ছিল আমার অপেক্ষার দৃশ্যটি। এত সহজ একটা শট দিতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলগুলো ধরতে পারছিলাম না। পরে অবশ্য ঠিক হয়ে যায়। তবে কষ্ট সার্থক হয়েছে টিভিসিটি সবার ভালো লেগেছে জানতে পেরে।’
তিনি আরো বললেন, ‘আমার জনপ্রিয়তা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে এই এক কাজ করে। কোনো পাবলিক প্লেসে গেলে সবাই বলে সেভেন আপের সেই মিষ্টি মেয়েটা।’
প্রথম টিভিসিতে নিলার পারফরমেন্স ভালো লাগায় সেভেন আপ কর্তৃপক্ষ তাঁকে দিয়ে কয়েক মাসের ব্যবধানে আরো একটি টিভিসি করায়। নির্দেশনা দেন কৃষ্ণেন্দু। এটি ছিল একটি অফারের টিভিসি। দেখা যায় নিলা একটি সুপার শপ থেকে সেভেন আপ কিনে বোতল কানে দিয়ে মোবাইলের মতো হ্যালো হ্যালো করেন। এই কাণ্ড দেখে সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে তাঁর দিকে। পরে জানা যায়, সেভেন আপ কিনলে মোবাইল রিচার্জ ফ্রি। তখন নিলা বলেন, হ্যালো আপনারাও করুন। আর এই তিন শব্দের ডায়লগ দিতে তার ২০ বারেরও বেশি শট দিতে হয়। এত শট নিতে নিতে ডিরেক্টর, ডিওপি রেগে না গেলেও নিলা ঠিকই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে থাকেন। তাঁর মনে হচ্ছিল, সবাই তাঁকে কী ভাববে? একটা সাধারণ বিষয় আয়ত্তে আনতে পারছেন না। পরে পরিচালক বলেন, ‘তুমি কাঁদছো কেন? তোমার তো ভালোই হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি আরো ভালো পাওয়া যায় কি না।’ তখন স্বস্তি পান।
এই কাজটি করতে গিয়ে কান্না পেলেও পরবর্তী টিভিসি করতে গিয়ে পেয়ে গেছেন একঝাঁক বন্ধু। এটা ছিল আদনান আল রাজীবের নির্দেশনায় বাংলালিংকের টিভিসি। এর থিম ছিল ‘বন্ধুরা থাকলে জিতবে সবাই’। অডিশনে বন্ধু হওয়ার জন্য সিলেক্ট হলেও সেই ১০-১৫ জন মডেল কিছুতেই শুটিংয়ের প্রথম দিন বন্ধুসুলভ হতে পারছিলেন না। অবস্থা বেগতিক দেখে এডিওপি এসে বললেন, ‘তোমরা একসঙ্গে নাচানাচি কর। আমি ভিডিও করব। ডিরেক্টর দেখতে চেয়েছেন।’
‘কী যেন একটা ফাস্ট বিটের গান চালানো হলো। নাচতে নাচতেই সবাই সবার সঙ্গে ফ্রি হয়ে গেল। আর সেই থেকে এখনো সবাই খুব ভালো বন্ধু।’ বললেন নিলা। এই টিভিসিতে নিলা ছিলেন ক্রিকেটের আম্পায়ার। বন্ধু উইকেটে বল লাগাতে না পারলেও নিলা ঠিকই আউট ঘোষণা করেন। কারণ বন্ধুর হেল্প থাকলে তো সবাই জিতবেই!
নিলা সম্প্রতি ‘কুকিম্যান’ নামের বিস্কুটের নতুন একটি টিভিসি করেছেন। বানিয়েছেন বিপুল। কিছুদিনের মধ্যেই এটি টিভিতে দেখা যাবে।
You must be logged in to post a comment.