পিরোজপুর জেলার অন্যতম পুরানো বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্বরূপকাঠি। বর্তমানে এই উপজেলার নাম নেছারাবাদ। এখানে আছে অসামান্য সুন্দর তিনটি ভাসমান বাজার।
দেশের সবচেয়ে বড় কাঠের মোকাম এখানেই। এছাড়াও এ উপজেলায় আছে মৌসুমি ফল ও সবজির একটি ভাসমান বাজার আর শতবর্ষী পুরানো নৌকার হাট। একদিনেই দেখা সম্ভব এই তিন জায়গা।
স্বরূপকাঠী কাঠের বাজার
নদীর নাম সন্ধ্যা। এর তীর ঘেঁষা স্বরূপকাঠি (বর্তমানে নেছারাবাদ) শহর। বহু প্রাচীন এ শহরের নদীর পাড়েই দেশের সবচেয়ে বড় কাঠের মোকাম। সন্ধ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে স্বরূপকাঠী খালের মোহনায় বিশাল এলাকা জুড়ে চলে কাঠের এ বাণিজ্য।
সন্ধ্যার ওপারেও আরেকটি ছোট শহর ইন্দেরহাট। এখানেও চলে কাঠের জমজমাট ব্যবসা। নদীর মধ্যে বড় বড় নৌকা বোঝাই কাঠ আর কাঠ। কখনও কখনও নানান রকম গাছ পানিতে ভাসিয়েও রাখা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঠ ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন কাঠ কিনতে। বড় বড় কার্গো জাহাজ বোঝাই করে সেসব কাঠ পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
স্বরূপকাঠি কিংবা ইন্দেরহাটে আরও দেখা যায় গোলপাতা বোঝাই নৌকা। সুন্দরবন থেকে বাওয়ালীরা বড় বড় নৌকা বোঝাই গোলপাতা নিয়ে বিক্রির জন্য সন্ধ্যার দুই তীরের এ বাজারে নোঙর ফেলেন।
আটঘরের ভাসমান বাজার
স্বরূপকাঠি সদর থেকে নৌপথে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ভাসমান একটি বাজার আটঘর। আটঘরের খালের ছোট্ট একটি মোহনায় বসে এ ভাসমান বাজার। ছোট ছোট নৌকায় নিজেদের উৎপাদিত সবজি, ফল-মূল নিয়ে এ বাজারে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন কৃষকরা।
পাইকাররা এসব কিনে পাঠিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এ সময়ে এ হাটে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পেয়ারা, আমড়া আর শুপাড়ি। এই তিন কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য এ অঞ্চল বিখ্যাত। আটঘরের হাট সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে। খুব সকাল থেকে শুরু করে এ হাটের ব্যস্ততা থাকে দুপুর পর্যন্ত।
দুপুরের পর থেকে হাট ভাঙতে শুরু করে। স্বরূপকাঠি থেকে ইঞ্জিন নৌকায় এ বাজারে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ত্রিশ মিনিট।
স্বরূপকাঠি থেকে সড়কপথেও এ বাজারে সহজেই আসা যায়। তবে বাজারের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আসতে হবে নৌপথে।
কুড়িয়ানার নৌকার হাট
আটঘর বাজার থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বসে শতবর্ষী পুরানো একটি নৌকার হাট। এ অঞ্চলে নদী ও খালের প্রাধান্য থাকায় চলাচলের প্রধান বাহন নৌকা। কুড়িয়ানার এ নৌকার হাট বসে শুক্রবার। খুব সকাল থেকে কারিগররা নৌকা নিয়ে আসলেও বাজার জমে উঠে দুপুরের পর থেকে।
উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকার কারিগররা এখানে আসেন তাদের তৈরি করা নৌকা বিক্রি করতে। বিশাল জায়গা জুড়ে এখানে শত শত নৌকায় পরিপূর্ণ হয় এ হাট। বড় একটি নৌকার উপরে ছোট ছোট অনেক নৌকা এনে এখানকার খালে ভাসিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকেন বিক্রেতারা। আটঘর থেকে কুড়িয়ানার এ বাজারে ইঞ্জিন নৌকায় পৌঁছতে সময় লাগে বিশ মিনিট।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে স্বরূপকাঠি যাওয়ার সহজ উপায় নদীপথে। ঢাকার সড়রঘাট থেকে এমভি রাজদূত-৭ এবং অগ্রদূত প্লাস লঞ্চ চলে এ পথে।
ঢাকা থেকে সন্ধ্যায় ছেড়ে খুব সকালে পৌঁছায় স্বরূপকাঠি। ভাড়া প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
তিনজনের উপযোগী ভিআইপি কেবিন ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। স্বরূপকাঠি থেকে সারাদিনের জন্য ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া পাওয়া যায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায়।
কোথায় থাকবেন
স্বরূপকাঠিতে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। এ ভ্রমণে থাকাটাও জরুরি নয়। ঢাকা থেকে রাতের লঞ্চে ভ্রমণ করে পরের সারাদিন বেড়িয়ে আবার রাতের লঞ্চেই ফেরা যায়।
প্রায়োজনীয় তথ্য
এ ভ্রমণের পুরোটাই নদীপথে। সাঁতার না জানলে সঙ্গে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিতে ভুলবেন না। তিনটি বাজার ভ্রমণ শেষে হাতে সময় থাকলে নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতে পারেন এ এলাকার খালগুলোতে।
এখানকার খালগুলোতে বেড়াতে বেড়াতে দেখতে পাবেন স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা।
– বিডিনিউজ২৪.কম অবলম্বনে