‘আমি এই ছবিতে নীলা। মফস্বল শহরের মেয়ে। মেডিক্যাল কলেজে পড়ি। বাবা প্রভাবশালী। আমি তাঁর আদুরে মেয়ে। আমি শান্ত স্বভাবের। আমাকে সবাই আগলে রাখে।’ ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবিতে নিজের চরিত্র এভাবে বর্ণনা করলেন মম।
মমর মেজাজ, ব্যক্তিত্ব, গায়ের রং নীলার সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছিল। তাই চরিত্রটির পোশাক-আশাকও ভাবতে বসেছিলেন স্ক্রিপ্ট পড়ার সময়ই। পরিচালক শিহাব শাহিনের সঙ্গে কথা বলে ভাবনাগুলো মিলিয়ে নিলেন। ভাবতে ভাবতে একসময় দৃশ্যগুলো চোখের সামনে চলে এলো। সব সময় চোখের সামনে নীলা হাজির।
মম বলেন, ‘চরিত্রের সঙ্গে মানায় না এমন কোনো পোশাক পরিনি। লাইটিং, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলও খেয়াল রেখেছিলাম। ডিজাইনার লুনা পোশাকগুলো যত্নের সঙ্গে তৈরি করে দিয়েছেন।’
ছবিতে নীলাকে সালোয়ার-কামিজ পরতে দেখা যায়। কিন্তু এগুলোর কাটছাঁটে খুব বৈচিত্র্য। মনে হয়, নতুন কোনো ডিজাইন। মম বললেন, ‘আমি এ ছবিতে এমন কিছু পরেছি, যা কখনোই কেউ পরেনি। যেমন শূন্য থেকে আসে প্রেম গানটিতে যে সালোয়ার-কামিজ পরেছি, তাতে এমন কাট দিয়েছি-না আনারকলি মনে হয়, না কামিজ। অন্যরকম লুক আনতে পাঁচ-ছয় হাত ওড়না ব্যবহার করেছি। এ জন্য লুনা আপুকে দুটি ওড়না জোড়া লাগাতে হয়েছে। তবে ওড়নার জোড়া ঢাকতে নয়, বরং বড় গলার কামিজে অনেকটা ফাঁকা থাকায় কিছু এমব্রয়ডারি করা ফুল বা বড় পাথর লাগিয়েছি। এতে করে নেকলেসের অভাবও পূর্ণ হয়েছে।’
ছবির সবগুলো পোশাকেই বড় গলা ব্যবহার করেছেন মম। তাই খরচ বেঁচেছে, নেকলেস পরতে হয়নি। তবে নীলার ভেতরের স্ফূর্তি ও ছন্দ বোঝাতে বেশির ভাগ পোশাকের পেছনে ও ওড়নার দুই পাশে ঝুনঝুনি ব্যবহার করেছেন। পায়ে পরেছেন নূপুর আর এক হাতে চুড়ি। ছবিতে নীলার এন্ট্রির সময় প্রথমেই তার পায়ের নূপুরের রিনিঝিনি শব্দ শোনা যায়। এরপর তাঁর ব্যতিক্রমী ওড়না দেখা যায় আর সব শেষে হলদে বসনটি। মম বলেন, ‘দৃশ্যটি আউটডোরে হয়েছে। প্রচুর সবুজ ছিল। তাই সম্পূর্ণ বিপরীত রং হিসেবে হলুদ বেছে নিয়েছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা পড়ার সময় একটি বিষয় ছিল কালার অ্যান্ড সাইকোলজি। এতে কোন রং দিয়ে কী ধরনের মানসিকতা বোঝায় তা শেখানো হয়। তখন জেনেছি, হলুদ হলো উচ্ছ্বাসের রং। এ জন্য এই দৃশ্যে হলুদের বিকল্প ভাবতে পারিনি।’
এমনিভাবে মম ছবির প্রতিটি দৃশ্যের জন্য আলাদা আলাদা রং বেছে নিয়েছেন পোশাকে। আউটডোর ও ইনডোরের পোশাকেও ফারাক ছিল। কারণ আউটডোরের দৃশ্য মানেই ঘরের বাইরে যাওয়া। আর ঘর থেকে বেরোতে গেলে সবাই একটু পরিপাটি হয়ে বের হয়। এ জন্য আউটডোরে নীলা পরেছে উজ্জ্বল রঙের জর্জেট, কাতান বা শিফন। আর ইনডোরে ঢোলাঢালা সালোয়ার পরেছেন স্বস্তি বোঝাতে। কামিজেও হালকা রঙের ওপর ফ্লোরাল প্রিন্টকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে সুতি অনায়াসে এড়িয়ে গেছেন। কারণ সুতি ইনডোরের লাইটে ভালো দেখা যায় না।
শুধু ইনডোর আর আউটডোরই নয়, ছবির বিরতির আগে আর পরেও মমর পোশাকে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। প্রথমার্ধে মম একজন উচ্ছল প্রেমিকা। কিন্তু মনের মানুষ যদি তাঁকে ছেড়ে চলে যায়, তখন নিশ্চয়ই মনের অবস্থা এক রকম থাকে না। এ জন্য বিরতির পর নীলাকে পাওয়া যায় গাঢ় সবুজ, কালো, অ্যাশ রঙের পোশাকে। অথচ প্রথমার্ধে তিনি প্রায় সব উজ্জ্বল রংই পরেছেন। এ নিয়ে মম বলেন, ‘বিরতির ঠিক পরের দৃশ্যে আমি একদম সাদা নেটের পোশাক পরি। কারণ এ সময় আমার মন ভেঙে গেছে। আমার ভেতরে উচ্ছ্বাসের মাত্রা শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়ের স্থিরতা ফুটিয়েছি সাদা পোশাকে। আবার যখন ভিলেন ইরেশ জাকেরের সঙ্গে আমার আংটিবদল হয় তখন পরি বেগুনি পোশাক। ইচ্ছা করেই লাল-গোলাপি এড়িয়ে গেছি। কারণ আমি তো এই বিয়েতে রাজি নই যে লাল পরব। আবার গোলাপি পরিনি আমার গায়ের রং খুব বেশি ফর্সা নয় বলে। তবে শেষ দৃশ্যের বিয়ের সময় জমকালো লেহেঙ্গা পরেছি। কারণ আমার মনে হচ্ছিল, হিরো আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নেবেই।’
এমনিভাবে গানের দৃশ্যগুলোতেও মম ছন্দ বুঝে পোশাক নির্বাচন করেছেন। সাধারণ জীবন থেকে গানকে আলাদা করতেই তিনি ‘তুমি ছুঁয়ে দিলে মন’ গানে সাদা লেহেঙ্গা আর কমলা কাতানের লেহেঙ্গা পরেছেন। আর ‘শূন্য থেকে এসে প্রেম’ গানে আনারকলি ধাঁচের জমকালো প্যারোট গ্রিন ও পার্পেল কামিজ বেছে নিয়েছেন। নেপাল থেকে আদিবাসী মোটিফের ব্যাগ, চুড়ি ও কানের দুল আনিয়ে নিয়েছিলেন মম
শুধু কি পোশাক? তাঁর ব্যবহৃত কানের দুল, ব্যাগ, জুতায়ও ছিল বিশেষত্ব। বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে নেপাল থেকে আদিবাসী মোটিফের ব্যাগ, চুড়ি ও কানের দুল এনেছেন। পরেছেন ঝুমকো, পাশা, কাঁধ পর্যন্ত ঝোলানো দুলও। ব্যাগেও ছিল কাপড়, লেদারের কারুকাজ। ইচ্ছা করেই সানগ্লাস পরেননি, কারণ চরিত্রের সঙ্গে যাচ্ছিল না। দৌড়ের দৃশ্যে সেমি হিল বা ফ্ল্যাট আর অন্যান্য দৃশ্যে ফ্যাশনেবল জুতা দেখা যায় তাঁর পায়ে।
নিজের মধ্যে বাঙালিয়ানা আরো বেশি করে ফুটিয়ে তুলতে মম সব সময় চুল ছেড়ে রেখেছেন হালকা স্টাইরাল করে। তবে পার্টিতে চুলে পনিটেল ও খোঁপা করতে দেখা গেছে।
মেকআপে রেখেছেন নিজস্বতা। বেশির ভাগ সিনে মুখে হলুদাভ ভাব রেখেছেন। এটা সচেতনতাবেই করেছেন গায়ের রঙের জন্য।
একনজরে
মোট পোশাক ৪২টি
* লেহেঙ্গা ৪টি
* সালোয়ার-কামিজ ৩৫টি
* জুতা ১২ জোড়া
* কানের দুল ২৫ জোড়া
* নূপুর ১০ জোড়া
* চুড়ি ১৫ ডিজাইনের
* নেকলেস বউসাজে দুইবার
* সবচেয়ে দামি পোশাক শেষ দৃশ্যের বিয়ের লেহেঙ্গা
You must be logged in to post a comment.