আমরা সবাই জানি, হৃদপিণ্ড বুকের ভেতরের থাকে। বুকের কাছে কান পেতে কাউকে বলি, ধুকপুক শোনো তো! কিন্তু হৃদপিণ্ডটি যদি বুকের বাইরে থাকে? বুক ঠেলে বেরিয়ে আসা হৃদপিণ্ড নিয়ে কেউ বেঁচে থাকতে পারে? হ্যাঁ পারে। কেউ না পারলেও রাশিয়ার এই ছোট্ট মেয়েটির ৬ বছর কেটে গেল বুকের বাইরে হৃদপিণ্ড নিয়ে, হৃদপিণ্ড ছুঁয়ে। মেয়েটির নাম ভিরসাভিয়া বারান গাঞ্চারোভা।
মেডিকেলের ভাষায় অসুখটির নাম থোরাকো-অ্যাবডোমিনাল সিনড্রোম, যে অসুখে শরীরের অভ্যন্তরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা অরগ্যান বাইরে বেরিয়ে এসে বাড়তে থাকে। ভিরসাভিয়া এই বিরল অসুখে ভুগছে।
ভিরসাভিয়ার ৬ বছরের এই জীবনটির পুরোটাই সংগ্রামের। মেয়েটি জন্মেছে বুক ও পেটের বাইরে হার্ট ও অন্ত্র নিয়ে। তার হৃৎস্পন্দন দেখা যায়, শোনা যায়। কারণ তা বুকের বাইরে পেটের কাছে রয়েছে।
পাঁজরের আড়ালে সুরক্ষিত থাকে হৃদপিণ্ড। কিন্তু ভিরসাভিয়া হৃদপিণ্ড বুকের পাতলা ত্বকের আবরণে ঢাকা। শারীরিক গঠনের এই অস্বাভাবিকতা দেখে অনেকে ঘাবড়ে গেলেও এই বাচ্চা মেয়েটি এসবের তোয়াক্কা করে না।
ডাক্তাররা জানিয়েছেন, প্রতি ১০ লাখ শিশুর মধ্যে একজন এই সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারে। এতটাই জটিল এর অস্ত্রোপচার, এর মধ্যে অনেক নামী হাসপাতালও ফিরিয়ে দিয়েছে মেয়েটিকে। অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে পারেনি।
বস্টনের এক শিশু হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, বাচ্চাটির উচ্চ রক্তচাপ থাকার কারণে তারা অস্ত্রোপচার করতে পারছেন না।
রাশিয়ায় জন্মেছে, কিন্তু চিকিৎসার জন্য এখন মায়ের সঙ্গে আমেরিকার দক্ষিণ ফ্লোরিডায় চলে গিয়েছে ভিরসাভিয়া। জন্মের সময় থেকেই বিভিন্ন ধরণের শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে সে।
আপাতত দক্ষিণ ফ্লোরিডায় ইংরেজি শিখছে সে, যদিও শারীরিক অবস্থার জন্যে কোনো স্কুলে তাকে ভর্তি করা হয়নি। সেখানে এখন চিকিত্সা শুরু না হলেও ছোট্ট মেয়েটি নাচ, গান, আঁকা নিয়ে মেতে রয়েছে।
ভিরসাভিয়া যীশুর ছবি আঁকতে খুব ভালবাসে। বাড়িতেই ব্যালে শেখে। আর মাকে খুব ভালবাসে। কারণ, তার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছাকাছি, সবসময়ই রয়েছে তার মা।
‘আমি স্কুলে যাই না। বাইরে নাচতেও যাই না। কিন্তু ঘরে আমি সব করি। নাচি, পড়ি। আমার মা আমার হার্টে হাত রাখে। আমি মায়ের স্পর্শ পাই। ভালো লাগে। আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি।’ বলে এই আদুরে মেয়েটি।
শুধু তাই-ই নয়, ভিরসাভিয়া ভালোবাসে ঘোড়া, ভালোবাসে ডলফিন। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আদর করে কুকুরছানাকেও। মায়ের বুকে আশা, সময়মতো ভিরসাভিয়ার সঠিক চিকিত্সাটাই হবে। আর কে বা প্রার্থনা করবে না ছোট্ট এই সোনামণিটার সেরে ওঠার জন্য!
-বাংলামেইল অবলম্বনে