জেনে নিন

বিমনের ভিতরের পরিবেশ কতটা স্বাস্থ্যকর


 বিরল ব্যতিক্রমের কথা বাদ দিলে বিমানযাত্রার ব্যাপারটিই অভিজাত-সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে। অভিজাত মানুষেরা নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে একটু বেশিই সচেতন। তবে বিমান যাত্রার বেলায়? যাত্রী-ক্রু-পাইলটেরা বিমানের অভ্যন্তরে কি সুরক্ষিত আর জীবাণুমুক্ত থাকেন? তারা যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জীবাণুর সমুদ্রে সাঁতার কাটেন না বিমানের অভ্যন্তরে; এটা কি নিশ্চিত করছে বিমান কোম্পানিগুলো?

বিবিসির ‘ফিউচার’ বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, না করেনি। ‘হাউ টু ক্লিন এন এয়ারলাইনার’ প্রতিবেদনের দাবি, প্রতিটি ফ্লাইটেই ভয়বহ জীবানুর অস্তিত্ব থাকতে পারে।  বিমানের প্রথম শ্রেনীর কেবিন কিংবা ইকোনমিক কেবিন, সিট, হেডফোন এমনকি সিটের সামনে যে টেবিল আছে, সেখানেও ভয়াবহ জীবাণুর উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারবেন আপনি।

অনিচ্ছাকৃতভাবে বহন করা  এসব ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে যাত্রীদের এবং ক্রদের। কিন্তু এসব জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পেতে এয়ারলাইনসগুলো কী ব্যব্স্থা নেয়? কীভাবে তারা তাদের যাত্রীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করে?

বিমানের সিট বা এর পেছনের পকেট কিংবা হাতল হতে পারে জীবাণুর অন্যতম উৎস
আসল কথা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ এয়ারলাইনসই বিমানের ভেতরকার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়। বিমানের ভেতরের পরিবেশ কীভাবে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখা যায়, কিংবা বিমানের ভেতরের প্রতিটি অংশকে জীবাণুমুক্ত রাখা যায় যাতে যাত্রীরা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে, তা নিয়ে সচেতন নয় অধিকাংশ এয়ারলাইনস কোম্পানি।

যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যের অবার্ন ইউনিভার্সিটির ডিটেকশন এন্ড ফুড সেইফটি সেন্টারের সহকারী পরিচালক জেমস বারবারি বলেন, এ সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছে। জীবাণু সংক্রমক একটি বিমানের যাত্রীরা ধারাবাহিকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। তিনি বলেন, অমাদের প্রত্যেকেই আমাদের শরীরে, জামা কাপড়ে এবং আমাদের শরীরে অভ্যন্তরে রোগ জীবাণু বহন করছি। অপরিচ্ছন্ন কোন স্থানে এ জীবাণুর সংক্রমণ বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে, আশেপাশের অন্য মানুষজন তাতে সংক্রমিত হচ্ছে। ।

গত বছর (২০১৪) বারবারি এবং তার সহযোগীরা তাদের দুই বছরের একটি গবেষণারে ফলাফল প্রকাশ করেছেন।  সেখানে বলা হয়েছে, বিমানের বিভিন্ন অংশে যেমন, সিটের হাতল, সিট, ট্রে টেবিল, জানালার ফাঁক, টয়লেট, নব ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে এমঅারএসএ, ই.কোলাই এর মত ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন তারা। একই সাথে তাঁর দল বলেছে, এমআরএসএ এর মত মরণঘাতী ব্যকটেরিয়া ১৬৮ ঘন্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। আর ই.কোলাই0157:H7 সক্রিয় থাকতে পারে অন্তত ৯৬ ঘন্টা পর্যন্ত। এ ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া মানুষের কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে।

খুব কম সংখ্যক বিমানই প্রতিটি ফ্লাইটের পর ওয়াশরুম এভাবে পরিষ্কার করে

বিমানের ভেতর এ ব্যাকটেরিয়া সমস্যা এয়ালাইনসগুলোকে উভমুখী সমস্যায় ফেলেছ। একে তো তারা উন্নত যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইছে, অন্যদিকে ফ্লাইটের সময় কমিয়ে ও অন্যান্যভাবে যাত্রীদের আকর্ষণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত মুনাফাও নিশ্চিত করতে চাইছে।

কিন্তু বিমানের ভেতরে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কীভাবে নিশ্চিত করা যেতে পারে?

যাত্রীবাহী বিমানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের নিশ্চয়তা দেয়া এয়ার সার্ভ এর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম টেইলর বলেন, যাত্রীবাহী বিমানকে জীবাণুমুক্ত করতে হলে প্রচুর পরিকল্পনা, কর্মচারী, সুবিধা এবং সর্বোপরি একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

এয়ার সার্ভ এর বিমানগুলো অবতরণের পর বিমানবন্দরের কোন গেটে থামবে তা সংশ্লিষ্টদের  আগে থেকেই বলে দেয়া হয়। জিপিএস ডিভাইস সংযুক্ত এ বিমানগুলোকে পরে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। অন্য একটি দল সঠিকভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলল কিনা, তা তদারক করে।

অন্যান্য আরো কিছু এয়ারলাইনসেরও একই ধরণের পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা আছে।

বিমান যখন কোন বিমানবন্দরে পার্ক করা থাকে, তখন এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য খুব অল্প সময়ই পায়। তখন ক্রুরা তাড়াহুড়ো করে বিমানের ভিআইপি এলাকা যেমন বিজনেস ক্লাস এবং ইকোনমি ক্লাসেই মূলত একটু আধটু পরিষ্কার করে থাকে। আরা পুরো বিমানের বাকি অংশের পরিষ্কার মূলত কোন ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে কিনা বা কোথাও পানি পড়েছে কিনা, ইত্যাদি দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

কিন্তু একটি বিমান যদি সারারাতের জন্য পার্ক করা থাকে, তাহলে এর ভেতরের পরিবেশের প্রতি নজর দেয়ার যথেষ্ট সময় থাকে।

অ্যাডাম টেইলর বলেন, বিমান কতটুকু পুরষ্কার করা হবে, কীভাবে পরিষ্কার করা হবে তা আসলে পার্কিং-এর সময়ের উপর নির্ভর করে। তাছাড়া একেক প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কারের ধরনও একেকরকম।

যেমন লুফথানসার কথাই ধরা যাক। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিমানই ৫০০ ঘন্টা ফ্লাইটের পর নিখুঁতভাবে পরিষ্কার করা হয়। অর্থাৎ, বিমানের প্রতিটি অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। আবার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস প্রতি মাসে একবার তাদের বিমানগুলোতে এ ধরনের পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায়। এ ধরণের অভিযানে বিমানের প্রতিটি অংশ এমনকি কেবিনের দরজার হাতলও বাদ যায় না।
তবে হতাশার কথা হচ্ছে প্রতিটি এয়ারলাইনস এ কাজটি করে না।

-প্রিয়.কম অবলম্বনে