বিনোদন

বলি বলি করেও বলা হলো না (পারভিন সুলতানা দিতি)


‘বিয়েতে টাওয়াল দিয়ে ঘোমটা দিয়েছিলাম’

পারভিন সুলতানা দিতি

অভিনেত্রী, নির্দেশক ও সংগীতশিল্পী

কথাটা আমার ছোটবেলার। তবে এর আবেদন আমার কাছে দুই রকমভাবে ধরা দেয়। একটি ভালো লাগার আর অন্যটি মন্দ লাগার। কেন? তাই এবার খুলে বলছি। আমার গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁ। স্বাধীনতার ঠিক পরপর আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করি। বয়স হবে বড়জোর পাঁচ বছর। আমার বড়বোন গান শিখতেন। তখন আমি এত ছোট যে গান শেখার বয়সই হয়নি। কিন্তু আমি বোনের পাশে বসে শিক্ষক যা শেখাতেন তা মন দিয়ে শুনতাম। একদিন নিজে থেকেই হারমোনিয়াম দিয়ে দিব্যি জাতীয় সংগীতের সুর বাজাতে লাগলাম। এটা দেখে তো সবাই ভীষণ অবাক। পাঁচ বছরের একটা মেয়ে, তাও আবার কোনো শিক্ষা ছাড়া কিভাবে এই কাজটা করল! এ খবর কী করে যেন জানাজানি হয়ে গেল। আমিও গান শেখা শুরু করলাম। তখন মাসের মধ্যে কোথাও না কোথাও আমাকে গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হতো। মোটামুটি ওই সময় সোনারগাঁয়ে রীতিমতো স্টার আমি। গানের এই মেধা দেখে মা-বাবা আমাকে ঢাকার আজিমপুরে মামার বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি মা-বাবার অনুপস্থিতিতে দুরন্তপনা ভুলে একেবারেই শান্ত একটি মেয়ে হয়ে গিয়েছিলাম। জানালা আমার উচ্চতার চেয়ে বেশি ছিল বলে রেলিং ধরে ঝুলে বাড়ি যাওয়ার রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। স্কুল ছুটি হলেও গান-নাচের ক্লাস থাকত বলে বাড়ি যেতে পারতাম না। যখন দু-এক দিনের জন্য যেতাম তখন যে কী ভালো লাগত, তা বলে বোঝাতে পারব না।Parvin Sulatana Diti apu 3

যেদিন বাড়ি থেকে ফেরার পালা আসত সেদিন অতি ধীরে বাড়ির সিঁড়ি থেকে নামতাম, শুধু বাড়িতে যেন দুই দণ্ড হলেও বেশি থাকতে পারি এই আশায়। এ ঘটনাগুলো মনে হলে এখনো অজান্তে চোখের কোণে পানি জমে। এটা নিঃসন্দেহে আমার জন্য খারাপ লাগার অনুভূতি। তবে ভালো অনুভূতি তো অবশ্যই আছে। তা হলো-ওই বয়সে ঢাকায় এসে গান-নাচ না শিখলে আমি আজকের দিতি হতে পারতাম না।

এবার বলব আমার তারুণ্যের দিনগুলো থেকে একটি ঘটনা। তখনকার দিনে এ ঘটনার জন্য কত যে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। তবে এখন বলতে কোনো বাধা নেই। এটা আমার আর প্রয়াত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর বিয়ের ঘটনা। হ্যাঁ, এটা স্বাভাবিক যে একজন নায়িকার সঙ্গে একজন নায়কের বিয়ে হতেই পারে। কিন্তু আমাদের বিয়ের কাহিনী যে কারো জন্য অন্য রকম একটি গল্প হতে পারে।

তখন আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হিট নায়িকা। সবাই বলত, আমি নাকি কাউকে পাত্তাই দিতাম না। তেমনি সোহেল চৌধুরীও মনে করত, ওকে আমি পাত্তা দিই না। তবে ও সব সময় চাইত আমার সঙ্গে মিশতে। বিশেষ এই আকর্ষণের কারণ হলো গান। ও নায়ক হলেও গাইতে ও গিটার বাজাতে পারত। আর আমি তো নায়িকা হওয়ার আগেই গানে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া; কিন্তু আমি ওকে কখনো সেভাবে গুরুত্ব দিতাম না। এরই মধ্যে আমার পরিবার বিয়ের জন্য আমাকে চাপ দিতে লাগল। আমিও ঘোষণা দিলাম, আর ছবি করব না। পরিবারের মতে আমার বিয়ে হবে এক মাস পরই। ঠিক এমন সময় একের পর পরিচালককে আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি। তেমনি একদিন আমার বাসায় হাজির আমজাদ হোসেন আর সোহেল চৌধুরী। তারা আমাকে হীরামতি ছবির অফার দিল। এই ছবির নায়িকা ছিলেন সুচরিতা ম্যাডাম। কী একটা কারণে উনি ছবিটি শুটিং শুরুর দুই দিন আগেই ছেড়ে দিলেন। তাই সোহেল বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলল, ‘তুমি তো বিয়ে করেই ফেলছ। তার আগে আমাদের এই ছবিটা করো। খুব ভালো গল্প।’

পরে আমি রাজি হলাম। শুটিংয়ে গেলাম সিলেটে। টানা ২০ দিন শুটিং করলাম। বিয়ের আর মাত্র ১০ দিন বাকি। এরই মধ্যে নিজের অজান্তে সোহেলের সঙ্গে প্রেম হয়ে গেল। শুটিং শেষে নিজের বাড়িতে যেতে সাহস হলো না। উঠলাম সোহেলের বাসায়। সেদিন রাতেই কাজি ডেকে আমাদের বিয়ে পড়ানো হলো। তখন আমার স্কার্ট পরা ছিল। তাই ওড়না ছিল না। তবে বউয়ের কি মাথায় ঘোমটা না দিলে হয়? তাই বাথরুম থেকে আধা ভেজা টাওয়াল এনে আমাকে ঘোমটা দিতে হয়েছিল, হা হা হা।

অনুলিখন : মাসিদ রণ