পামারস্টোনকে পৃথিবীর সর্বশেষ দ্বীপ বলা হয়। প্রায় দেড়শ বছর আগে ১৮৬৩ সালের দিকে উইলিয়াম মাস্টার্স নামের এক ইংলিশ ভদ্রলোক অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে এই দ্বীপটি আবিষ্কার করেন।
কুক দ্বীপের প্রধানের মেয়ে আকাকাইঙ্গোরোকে বিয়ে করে তিনি এই দ্বীপে চলে আসেন। যদিও পরবর্তী সময়ে উইলিয়াম তার দুই চাচাতো বোনকে বিয়ে করে তিন বউয়ের এক বৃহৎ সংসার প্রতিষ্ঠা করেন এই দ্বীপে।
উইলিয়াম আজ থেকে বহু বছর আগে বসতি শুরু করলেও আজও পামারস্টোন সভ্য জগত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। পুরো দ্বীপটিতে মাত্র ৬২ জন মানুষ বাস করেন। যদিও এই ৬২ জনই উইলিয়ামের বংশধর।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বছরে মাত্র দুইবার একটি জাহাজ প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে দ্বীপটিতে নোঙর করে। এসময় ইচ্ছে করলে কোনো পর্যটকও আসতে পারে। তবে পর্যটক যদি কোনো মতে ফেরার সময় জাহাজ ধরতে না পারে তাহলে তাকে বছরের বাকি দিনগুলো এই দ্বীপেই কাটাতে হবে। কারণ এখানে নেই কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সুবিধা।
অনেকেই মনে করেন যে পামারস্টোনের মালিক মূলত উইলিয়াম মাস্টার্স। তবে আদতে তা নয়। এই দ্বীপের প্রথম মালিক ছিলেন একজন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী জন ব্রান্ডার। আর এই ব্যবসায়ীর হয়ে দ্বীপটি দেখাশোনা করতেন উইলিয়াম। তিনি দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করতেই দ্বীপের চারপাশে পাম গাছ লাগাতে শুরু করেন। প্রথমে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ওই ব্রিট্রিশ ব্যবসায়ী নারিকেলের তেল সংগ্রহ করার জন্য পামারস্টোনে আসতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে দ্বীপে আসার হার কমতে থাকে ব্যবসায়ীর। তিনবছর আর ফিরে আসেননি জন ব্রান্ডার।
বর্তমানে দ্বীপের সবচেয়ে বয়স্ক অধিবাসীর নাম মামা আকা। তার বয়স এখন ৯২ বছর। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি চার্চে কাটান। অন্যান্যরা কোনো পরামর্শের জন্য সবার আগে তার কাছেই আসে। আর তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে সেই সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দেন।
দ্বীপের অধিকাংশ জনগণেরই পেশা মাছ ধরা। তাদের নিজস্ব অফিস আছে, আছে সরকারি ব্যবস্থা। এমনকি দ্বীপের বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য আছে স্কুলের ব্যবস্থা। দ্বীপের মানুষ বছরে একবার ঘুরতে যায়, তবে এই ঘুরতে যাওয়া অবশ্য পার্শ্ববর্তী কোনো দ্বীপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে টানা নয়দিন জাহাজ চালিয়ে বিক্ষুব্ধ ঝড় পাড়ি দিয়ে তবেই এই দ্বীপে পৌঁছাতে হয়। দ্বীপে আসার পথে হাজারো বাধা থাকায় সচরাচর কেউ এই দ্বীপে আসতে চায় না। তবে কারও যদি অত্যধিক প্রয়োজন হয় তাহলে লন্ডন থেকে বিমানযোগে লসঅ্যাঞ্জেলস হয়ে তাহতি পৌঁছুতে হয়। এরপর তাহতি থেকে নৌকায় করে দ্বীপে যেতে হয়। সেই নৌকাতেও আবার টানা পাঁচদিন সময় লাগে। তারপরেও যদি আপনি শত বাধা পেরিয়ে দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছুতে পারেন তাহলে দেখতে পাবেন নৌকা নিয়ে একদল মানুষ আপনাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তৈরি হয়ে আছে।
‘হ্যালো হ্যালো, আপনারা আমার এখানেই থাকবেন। নৌকা ঠিকঠাক ভিড়ান, আমরা আপনাকে উপরে নিয়ে যাব। এরপর আপনি সেখানে সুস্বাদু খাবার খেতে পারবেন।’ এই হলো পামারস্টোন দ্বীপের বাসিন্দাদের আতিথিয়তার রীতি।
– নিউজ৬৯বিডি অবলম্বনে