মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কালকি
চড়বে সোনার পালকি।
আজকাল মাথায় টায়রা দিয়ে সাজানো বউ দেখা গেলেও সোনার পালকি তো দূরের কথা, কাঠের পালকিও খুব একটা নজরে পড়ে না। অথচ এমন এক সময় ছিল_ যখন কিনা পালকি ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। এক সময় বিয়ের বরযাত্রায় পালকি ছিল এক অবিচ্ছেদ্য জৌলুস। বেহারারা পালকি নিয়ে প্রথমে বরের বাড়ি আসত। বর মুখে রুমাল চেপে পালকিতে উঠে বসত। বরের সঙ্গে শিশুরা পালকিতে চড়ে বসত। বেহারারা হাতে লাঠি, কোমরে গামছা বেঁধে হেলে-দুলে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিত। বরযাত্রীরা হেঁটে বা রিকশা-ভ্যান, গরুরগাড়িতে চড়ে পালকির সঙ্গে যেত। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পালকি এগিয়ে চলে আর বেহারাদের ‘ওহুমনা, ওহুমনা, ওহুমনা রে…’ গীত শুনে গ্রামবাসী টের পেত যে বর যাচ্ছে। গ্রামবাসী ছেলে-বুড়ো সবাই ছুটে আসত পালকির ফাঁক দিয়ে বরকে এক নজর দেখার বাসনায়। ছোট ছেলেমেয়েরা পালকির পথ আগলে দাঁড়াত। আর গ্রামের মেয়েরা চেষ্ঠা করত বেড়ার ফাঁক বা ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বরকে দেখার। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগের রামায়ণ মহাভারতে পালকির উল্লেখ পাওয়া যায়। পালকির প্রচলন যে কত প্রাচীনকাল থেকে এ থেকেই তা অনুমেয়। পালকির সামনে-পেছনে দুটি হাতল থাকে। কোনো কোনো পালকিতে আবার দু’পাশে দুটি করে মোট চারটি হাতল থাকত। উপরে টিন বা কাঠের ছাউনি, চারদিকে কাঠের বেড়া, নিচে শক্ত পাটাতন। একদিকে একটি ছোট্ট দরজা, আর দরজার বিপরীত দিকে ছোট একটি জানালা। দরজায় থাকত বাহারি ডিজাইনের কাজ করা পর্দা। ছোট ছোট পালকি সাধারণত দু’থেকে চারজনে বহন করত। তবে বড় বড় পালকির ক্ষেত্রে আট-দশ কিংবা বারোজন বেহারারও দরকার হতো। পালকি টানাই বেহারাদের পেশা। সাধারণত সব বেহারাই ছিল শক্তিশালী এবং পরিশ্রমী। তাদের একটি বিরাট অংশ আসত বিহার থেকে। তাই তাদের নাম হয় ‘বেহারা’। এ সূত্রে সব পালকিবাহকের নামই বেহারা হয়ে যায়। আজ আমাদের ভাবতে হবে পালকি কি শেষ পর্যন্ত আমাদের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে?
You must be logged in to post a comment.