দুই বছর আগের কথা। তিশার দিনগুলো ছিল খুবই সাদামাটা। নিয়ম করে কলেজে যান, সময়মতো টিউটরের সামনে বসেন। আর প্রিয় কাজ ছিল টিভি দেখা। ছোটবেলা থেকেই পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধবের মুখে কিউট, সুইট, সুন্দর- এসব প্রশংসা শুনতে শুনতে কখন যে মডেল হওয়ার ভূত মাথায় চাপে নিজেও টের পেলেন না। খুব ঘনিষ্ঠরা তো এও বলত, মডেল হতে যেসব গুণ দরকার সবই আছে তোমার মধ্যে, এবার নেমে পড়ো। একসময় নিজেও ভেবে দেখলেন, সবাই অযৌক্তিক কিছু বলছে না, আসলেই তিনি পারবেন।
হঠাৎ একদিন! কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিচিতজনের কাছ থেকে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে আসার অফার পেয়ে রাজি হয়ে গেলেন। ‘ছবি তুলতে কার না ভালো লাগে।
যখন শুনলাম সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে, মেকআপ লাগিয়ে স্টুডিওতে ছবি তুলতে হবে, তখন আর কিছু ভেবে দেখিনি। রাজি হয়ে যাই। পরে সেই ছবি দেখে র্যাম্পেও ডাক আসে। অল্প কিছুদিন র্যাম্পের মঞ্চে হেঁটেছি। তাতেই বড় বড় প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাই হয়তো নির্মাতার চোখে পড়তে সময় লাগেনি।’ এভাবেই নিজের শুরুর গল্পটা বললেন তিশা। প্রথমেই পড়লেন অমিতাভ রেজার হাতে। রবির একটি টিভিসি। তাঁর সঙ্গে আরো বেশ কজন মডেল ছিলেন, কিন্তু তাতে কী! নিজের স্বকীয়তা ঠিকই তুলে ধরতে পেরেছেন। রবির বিজ্ঞাপনে দর্শক তাঁকে সাদরে গ্রহণ করায় কর্তৃপক্ষ তিশার সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করে।
এ সময় রবির আরো কয়েকটি টিভিসি, ফটোশুট ও ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছেন তিশা। ‘রবির সঙ্গে প্রথম চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়েছে। আবারও তাঁরা দুই বছরের জন্য ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করতে চাইছে। এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’ বললেন তিশা। শুধু রবিই নয়, দুই বছরে এক ডজনেরও বেশি টিভি বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন রকম চরিত্রে অভিনয় করে তিশা মডেল হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। এর পেছনের গল্পটা শুধুই পরিশ্রমের। অনেক সাধনার। ত্যাগও কম নয়।
মিডিয়ায় কাজের জন্য পড়াশোনায় ঠিকমতো মন দিতে পারেন না। সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে পারেন না। প্রিয় বন্ধুবান্ধবীর সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে ব্যস্ততার কারণে। ‘এত ত্যাগের পর যখন সাধারণ দর্শক আমাকে দেখে চিনতে পারে, আমার কাজের প্রশংসা করে, ছবি তুলতে চায়, তখন সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।’- নিজের অভিব্যক্তি এভাবেই শেয়ার করলেন তিশা।
তিশার সঙ্গে ছবি তুলতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা যেমন কম না, তেমনি নিজেও যখন-তখন নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। এ জন্য ভার্চুয়াল দুনিয়ায়ও রীতিমতো তারকা তিশা। তাঁর এ জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে এ বছর মোবাইল ফোন কম্পানি সিম্ফনি নতুন মডেলের ফোন ‘সিম্ফনি এক্সপ্লোর এইচ২০০-র টিভিসিতে তাঁকে মডেল হওয়ার প্রস্তাব দেয়।
‘কোয়ালিটি আইসক্রিমের টিভিসি করতে গিয়ে আমাকে কত যে আইসত্রিম খেতে হয়েছে কাউন্ট করে কুলাতে পারিনি। প্রথম দিকের কাজ বলে বারবার বাজে শটের জন্য পরিচালকের বকাও হজম করতে হয়েছে। আর ঠাণ্ডা আইসক্রিম খেয়ে দাঁতের শিরশিরানি, গলা ব্যথার কথা না হয় নাই বললাম।’- হাসতে হাসতে জানালেন তিশা।
কারমো ম্যাট্রেসের টিভিসির শুটিংয়ের সময় ঘটেছিল আরো একটা মজার ঘটনা। একটা দৃশ্য ছিল ওপর থেকে ম্যাট্রেসের ওপর এসে পড়বেন তিনি। কিন্তু কোনো ব্যথা না পেয়ে তাঁকে খিলখিল করে হাসতে হবে। সব ব্যবস্থাও সেভাবে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শটের সময় দেখা গেল তিশা ওপর থেকে পড়েছেন ঠিকই কিন্তু ম্যাট্রেসের ওপর না পড়ে এর বাইরে ফ্লোরে। তখন তার কোমরের ব্যথা দেখে কে! হায় কপাল! এখন ব্যথা পেয়ে শুয়ে থাকলে চলবে না। তখনই আবার শট দিয়ে ব্যথা না পাওয়ার মিথ্যা হাসি ঝোলাতে হয়েছিল মুখে।
তিশার আরো টিভিসি
রাঙাপরী বডি কেয়ার, সিলন চা, ফিনলে চা, মামা নুডলস, ফ্রেশ পানি, সোহানা এলইডি টেলিভিশন, আখতার গ্রুপ, সানাসির ফ্যাশন। এ ছাড়া কলকাতায় করবেন একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের টিভিসির শুটিং।
You must be logged in to post a comment.