এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই এডুকেশন বিশেষজ্ঞরা কাজ করবেন কোথায়? বলা যায়, কোথায় কাজ করবেন না? তাদের জন্য কাজ করার প্রচুর ক্ষেত্র রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতোই তারা পিএসসি পরিচালিত সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও যোগদান করছে। তবে শিক্ষার জন্য রয়েছে এর নিজস্ব কাজের ক্ষেত্র। যেমন: শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার ইন্সট্রাক্টর, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসমূহ, সরকারিভাবে পরিচালিত বিভিন্ন প্রজেক্ট, শিক্ষার উন্নয়নে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিওসমূহ, NCTB, NAEM, NTRCA প্রভৃতি। প্রফেশনাল কোর্স হবার কারণে শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কারও কাজ করার কথা নয়। যদিও বাস্তবে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখি। বাংলাদেশের অন্য অনেক কিছুর মতোই এটিও একসময় পরিবর্তিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করি। এছাড়াও দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেবার সুযোগ এখানে অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নরওয়ে, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে শিক্ষা নিয়ে পড়ার জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেখান থেকে আইইআর এর অনেক শিক্ষার্থী ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন এবং অনেকে পড়ছেন। কাজেই শিক্ষার শিক্ষার্থীদের কাজ নিয়ে ততোটা চিন্তা না করলেও চলে। এখন নিশ্চয়ই আইইআর থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থী শুধু স্কুল শিক্ষক হবেন, এমন সংকীর্ণ ধারণা থেকে আমরা বের হতে পেরেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামটিই বলে দেয় এর কাজ সম্পর্কে। শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা হয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। তাই এখানকার শিক্ষার্থীরা একেকজন ক্ষুদে শিক্ষাবিদ হয়ে গড়ে ওঠে। তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা (Practicum: Micro-Teaching) তাদের করে তোলে আরও সমৃদ্ধ। সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালিত আইইআরের পড়াশোনায় একটি সেমিস্টার (৭ম সেমিস্টার) শিক্ষার্থীকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে তার বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তাও বৃদ্ধি পায়।
পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে এমন অবকাঠামোয় গঠিত শ্রেণীকক্ষ রয়েছে আইইআরে। রয়েছে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ পদার্থ, জীব, রসায়ন ও কম্পিউটার ল্যাব। দোতলায় উঠেই পাওয়া যাবে বিশাল লাইব্রেরি যার দুইদিকে রয়েছে সবুজের সমারোহ। আর নিচতলায় রয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি স্থান- ক্যান্টিন ও উন্মুক্ত মঞ্চ। আমরা যারা আইইআরের শিক্ষার্থী ছিলাম তাদের কাছে সব স্মৃতি ধূসর হয়ে গেলেও এই দুটি স্থানের হাস্যোজ্জ্বল দুষ্টুমির স্মৃতিগুলো নস্টালজিয়ায় ভোগায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আইইআর বরাবরই সহশিক্ষা কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তাই এখানে রয়েছে বিজ্ঞান ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, নেচার স্টাডি ক্লাব যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে পারে। নিয়মিতভাবে তারা নানারকম প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে।
এই হলো আমাদের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর)। এখান থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ অবশ্যই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে করে তুলবে আরও শক্তিশালী, আরও ফলপ্রসূ।
— আসমা জাহান মুক্তা
শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা, বাংলাদেশ।