বাংলাদেশ-ভারতসহ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই পানের সঙ্গে একটি জনপ্রিয় অনুষঙ্গ হিসেবে সুপারির নাম অাসবেই। অার বাংলাদেশে তো পান-সুপারি জুটিকে বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই দেখা হয়। শুধু পানের সঙ্গেই নয়, অনেকে এই সুপারি চিবোন এমনি এমনিই। কোথাও কোথাও এটিকে দেখা হয় ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে। এছাড়া বদহজম ও বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যার প্রতিকার হিসেবেও কোথাও কোথাও সুপারির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এশিয়ার জনপ্রিয় বাদাম জাতীয় এই ফলটিকে নিয়ে যতই রোমান্টিসিজম থাকুক না কেন, বিজ্ঞানীরা একে অভিহিত করেছেন প্রাণঘাতী মাদক হিসেবেই। এই নীরব মাদকের কারণেই প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
দেখা গেছে, বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-দশমাংশ সুপারি ব্যবহার করেন। এর কার্যক্ষমতা প্রায় ছয় কাপ কফির সমান।
পুরো এশিয়াজুড়েই এই সুপারি পাওয়া যায়। সুপারি গাছ ইংরেজিতে আরেকা পাম নামে পরিচিত। এর উদ্দীপক উপাদানের কারণে অনেকেই নিয়মিত এটি চিবুতে পছন্দ করেন। মাদক হিসেবে এটির কার্যক্ষমতা এতোটাই বেশি যে নিকোটিন, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনের পাশাপাশি সুপারিকেও বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানসিক বিভ্রমকারী মাদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যদিও নারী এবং শিশুসহ অনেকেই এটি ব্যবহার করেন, তবে কর্মক্ষম পুরুষদের মাঝেই সুপারির ব্যবহার বেশি। গাড়ি চালানো, মাছ ধরা কিংবা নির্মাণকাজের মতো কর্মকাণ্ডে দীর্ঘসময় জেগে থাকার জন্য এটি তারা সুপারি চিবান। তবে স্বল্প সময়ের এই সুবিধাটি আসে চড়া মূল্যের বিনিময়ে।
সুপারি ব্যবহারকারীদের মধ্যে উচ্চমাত্রায় মুখের ক্যান্সারের কারণে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমনকি প্রথমবার সুপারি ব্যবহার করার কয়েক দশক পরেও মানুষজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এশিয়ার যে কয়টি এলাকায় সুপারি খুব বেশি জনপ্রিয় তার একটি তাইওয়ান। সেখানে সুপারিকে বলা হয় ‘তাইওয়ানের চুইং গাম’।
তাইওয়ানের সরকার এখন কয়েক শতকের পুরনো এই অভ্যাসটি কমিয়ে আনা এবং প্রতিবছর হাজার-হাজার জীবন ঝরে পড়া থেকে রক্ষার জন্য জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এশিয়ার অনেক অঞ্চলে সুপারি স্থানীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিকে তাজা, শুকিয়ে কিংবা পানপাতা দিয়ে মুড়িয়ে খিলি বানিয়ে ব্যবহার করা হয়।
যদিও পানের খিলি বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে বানানো হয়, তবে সাধারণত চুন, পানপাতা, এলাচ বা দারুচিনির মতো মশলা এবং তামাকজাত জর্দার সঙ্গে মিশিয়ে এই খিলি তৈরি করা হয়।
আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এসব উপাদানের মধ্যে এলাচ এবং দারুচিনি ছাড়া বাকি সকল উপাদানকে ‘কার্সিনোজেন’ বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
চুনকে বিশেষ একটি সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, কারণ এটি ব্যবহারের ফলে মুখের ভেতর ছোট-ছোট অনেক ক্ষত তৈরি হতে পারে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অনেক উপাদান এসব ক্ষতের মাধ্যমে চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
তাইওয়ানের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হান লিয়াং-জুন বলেন, ‘ পান ব্যবহারকারীদের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনও জানেই না যে সুপারি মুখের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।’
উচ্চমাত্রায় সুপারি ব্যবহারের কারণে মুখের ক্যান্সারে মৃত্যুহারের মধ্যে প্রথম তিনটি অবস্থানের মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান। তবে সরকারি উদ্যোগের কারণে দেশটিতে সুপারি ব্যবহারের সংখ্যা এখন বেশ খানিকটা কমে এসেছে।
ভারত এবং থাইল্যান্ডও সম্প্রতি সুপারির ব্যবহার কমানোর জন্য প্রচারণা শুরু করেছে।
-বাংলাট্রিবিউন অবলম্বনে