প্রবাস

করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি বিনির্মাণে ইউসিইডি

রফিকুল ইসলাম আকাশ, ওয়াশিংটন ডিসি থেকেঃ হার্ভার্ড বিজনেস সার্ভিসেস এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চে ওয়াশিংটন ডিসি’তে সদর দফতর করে U.S. Centre for Cooperation & Economic Development (UCED) প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে সহযোগিতা মূলক কর্মকান্ড বিকশিত করার জন্যেই UCED গঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ, কানাডা, চীন, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজস্ব যোগাযোগ অফিস স্থাপন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, কানাডা, চীন, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, আইনবিদ, ব্যবসায়ী, বিদ্বান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে UCED গঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসাবে মোঃ শামসুল আলম চৌধুরী ছাড়াও অন্য ৪ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রয়েছেন, তারা হলেন: প্রাক্তন মার্কিন কংগ্রেসম্যান ডন বংকার, প্রাক্তন মার্কিন কংগ্রেসম্যান এড টাউনস, প্রাক্তন মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম বেটস এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর নীল ওয়াসারম্যান।

মিঃ চৌধুরী UCED এর ভূমিকা ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, “UCED ছোট প্রকল্প থেকে বৃহত্তর প্রকল্প সমূহে বিনিয়োগ, ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়তা, উদীয়মান প্রযুক্তি স্থানান্তরিতকরণ এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করতে পারে।” UCED চেয়ারম্যান বলেন যে তার প্রতিষ্ঠানটি কানাডাতে Mr. Wayne Hydeman, ভারতে Mr. Pankaj Jaswal, সংযুক্ত আরব আমিরাতে Jackson Chen, চীনে Mr. Benny XUE কে ভাইস চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আইন বিষয়ক সহায়তার জন্যে Attorney David Geneson পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

UCED তার শক্তিশালী সদস্য মন্ডলীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে যে কোনো দেশের সরকারী ও বেসরকারী প্রকল্পগুলো সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য গঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন বিনিয়োগকারীদের সাথে কাজ করছে যাতে করোনা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদেরকে সহায়তা করা যায়। মিঃ চৌধুরী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমরা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিশেষত: আমেরিকার সাথে অন্য দেশগুলোর রাজনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে সফল ভাবে কাজ করতে পারি। আমরা ব্যবসা ও বাণিজ্য, উদীয়মান প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগও নিশ্চিত করতে পারি।” তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা আমাদের যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডিয়ান বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বৃহত্তর অবকাঠামোগত উন্নয়ন (হাইওয়ে, ফ্লাইওভার, সেতু, এবং সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র), স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য পরামর্শ দিতে পারি।”

UCED এর ‘বর্জ্য থেকে জ্বালানি’ উৎপাদন বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে এবং এ জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০০% FDI এর ব্যবস্থাও করতে পারি। UCED সর্বনিম্ন ব্যয় এবং সময়ে Pre-cast Plant এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের সেতু, ফ্লাইওভার, কালভার্ট এবং প্রাক-সজ্জিত বহুবিধ ভবন নির্মাণ এর প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করতে পারে।

UCED যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এবং চীনের বেশ কয়েকটি বিনিয়োগকারী সংস্থার সাথে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্যে চুক্তি করেছে। UCED বিভিন্ন প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন করার জন্য একটি দক্ষ আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করতে পারে। UCED ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে Non Disclosure Agreement (NDA) স্বাক্ষর করেছে এবং ভারত ও ইথিওপিয়াতে কয়েকটি টার্নকি প্রকল্পে অর্থায়নে কাজ করছে। মিঃ চৌধুরী বলেন, “UCED বাংলাদেশ সরকারকে ১টি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে তবে তা খুব ধীর গতিতে এগুচ্ছে। ভারতে UCED খুব ভাল করছে।”

UCED এর ভাইস চেয়ারম্যান ও ভারতে UCED এর Chief Executive Mr. পঙ্কজ জাসওয়াল মুম্বাই থেকে বললেন , “দিল্লিতে ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছি। লক-ডাউন শেষে প্রকল্প গুলো বাস্তবায়নে আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। ভারতে FDI প্রবাহের সুবিধার্থে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংশোধন আনতে গত মাসে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই সম্পন্ন হবে।” এক সাক্ষাৎকারে UCED ওপর এক ভাইস চেয়ারম্যান কানাডার Chief Executive Mr. Wayne Hydeman বললেন, “আমরা ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইথিওপিয়ার সরকারের সাথে কাজ করছি। এ প্রকল্পে UCED এর বড় অংশীদারিত্ব থাকবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা এই মেগা প্রকল্পের অর্থায়নে দুবাই ও নিউ ইয়র্ক-এ আমাদের বিনিয়োগকারীদের সাথে কাজ করছি। লকডাউনের পরে যে কোনও সময়ে এ বিষয়ে চুক্তিটি সই করতে যাচ্ছি।”

UCED একটি নতুন গ্লোবাল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল কিছু ব্যক্তিদেরকে নিয়ে কার্যকর বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরী করেছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে যে করোনার কারণে পুরো বিশ্ব মারাত্মক মন্দার কবলে পড়তে পারে। এমনকি স্বল্প-আয়ের অনেক দেশই দীর্ঘকালীন দুর্ভিক্ষেও পড়তে পারে। তাই UCED তার অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলি অর্থায়নের জন্য বর্তমান সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে UCED অপেক্ষা করছে।