মা-বাবার সঙ্গে সিলেট যাচ্ছিলেন এলভিন। তাঁদের গাড়ির ড্রাইভারের পাশেই বসেছিলেন এলভিনের বাবা। তিনি হঠাৎ চেঁচিয়ে এলভিনের মাকে বললেন, ‘এই, তোমার মেয়ে ওই বিল্ডিংয়ের ওপর কী করে?’ বাবার কথা শুনে এলভিন অবাক। তিনি তো গাড়িতেই বসে আছেন। তখন বাবাই খোলসা করলেন। এলভিনের বিশাল বড় বিলবোর্ড দেওয়া হয়েছে সিলেটের ওই হোটেলের ওপরে। শুধু ওখানে নয়, সারা দেশেই যে তাঁর বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে, তা তিনি নিজেও জানতেন না। প্রথমবার নিজের এত বড় বিলবোর্ড দেখে খুশির চোটে এলভিন গাড়ি থেকে নেমে পাগলের মতো চেঁচাতে লাগলেন। কাণ্ড দেখে আশপাশের পথচারীরা তো ভ্যাবাচেকা। কিছু অতিউৎসাহী পথচারী কাছে এগিয়ে এসে জানতেও চায়, কেন চিৎকার করছে? পুরো ব্যাপারটা জানার পর কেউ কেউ তখনই এলভিনের সঙ্গে ছবি তুলতে লেগে যায়। এটা তো গেল একটা ঘটনা। এলভিনের চেনা-পরিচিত অনেকেই তাঁকে বিলবোর্ডে দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন করত। এলভিনের ক্যাম্পাসেও সাফল্যের রেশ ছড়িয়ে পড়ে। তখন তিনি পড়েন এআইইউবির বিবিএ থার্ড ইয়ারে। কিছুতেই বুঝতে পারতেন না, কেন সবাই তাঁকে দেখে বলে, হিট গার্ল আসছে। পরে একদিন ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে গিয়ে দেখেন, ক্যাশকাউন্টারের আশপাশেও প্রাণ ম্যাঙ্গো জুসের ছোট ছোট প্রিন্টেড বিজ্ঞাপন। তাহলে এই ঘটনা!
এটি ছিল প্রাণ ম্যাংগো জুসের টিভিসি। ২০১১ সালের একেবারে গোড়ার দিকে টিভিসিটির শুটিং হয়েছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কোক স্টুডিওতে। এই টিভিসির ডায়ালগ ছিল ‘ফিট হলেই হিট’। কয়েকজন বন্ধুর হাসি-ঠাট্টা ছিল টিভিসির গল্প।
‘ছোটবেলা থেকে শেখা নাচ আর অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি ঠিকই নিজেকে সফলভাবে প্রকাশ করতে পেরেছিলাম। দেখা গেল, টিভিসিটি প্রচারের পর থেকে সবার চেয়ে আমি ভালো সাড়া পাচ্ছি।’ যোগ করলেন এলভিন।
২০১০ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিডিয়ায় আসেন তাসনুভা এলভিন। সেখানে তিনি ছিলেন টপ ১২-এ। যদিও এখন এলভিনের নামডাক ওই বছরের অনেক বিজয়ীর চেয়ে বেশি। এ জন্য নিজের করা কিছু টিভি কমার্শিয়ালকেই কারণ হিসেবে দেখালেন এলভিন। তিনি বলেন, ‘লাক্স থেকে বাদ পড়ার পর খুব মন খারাপ হয়। কিন্তু একদিক থেকে ভালোই হয়েছিল। আমার সঙ্গে যাঁরা বিজয়ী হয়েছিলেন, তাঁরা প্রতিযোগিতা থেকে বেরোনোর আগেই আমি খুব বড় বাজেটের প্রাণ ম্যাংগো জুসের টিভি বিজ্ঞাপনটি পেয়ে যাই।’
এরপর ২০১২ সালে এলভিনের সুযোগ হয় নির্মাতা অমিতাভ রেজার নির্দেশনায় কাজ করার। তাঁর পরিচালিত সেভেন আপের টিভিসির মডেল হন এলভিন। এই টিভিসিটিও সাড়া ফেলে, এলভিনের একক বিলবোর্ডও হয়। ওই বছরই সরাফ আহমেদ জীবনের দুটি টিভিসি করেন। একটি ডিজিটাল বাংলাদেশের সরকারি বিজ্ঞাপন আর অন্যটি এনপলি প্লাস্টিক। শেষ টিভিসিটি করতে গিয়ে তিনি পুরো শুটিং ইউনিটকে ফেলে দেন মহাবিপাকে। ‘আমি সব সময় ওয়েস্টার্ন পোশাকে অভ্যস্ত। অনেকে বলে, আমার ভেতরে বাচ্চামি খানিকটা বেশি। কিন্তু এই টিভিসিতে একজন মধ্যবয়স্ক লোকের বউ হতে হয় আমাকে। এ জন্য অনেক কষ্ট করে মেকআপ-গেটআপ দিয়ে আমাকে বয়স্ক মহিলার মতো করা হয়। আর তা আয়নায় দেখেই আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করি। আমার যুক্তি হলো, সারা দেশের মানুষ আমাকে দেখবে, কেন আমি এমন বুড়ি সাজব? অনেকে অনেকভাবে বোঝাল, কিন্তু আমি কিছুতেই শান্ত হই না। পরে নির্দেশক জীবন ভাই এসে বোঝালেন, মডেলের কাজটা এমন, যেন তাকে চরিত্র অনুযায়ী নানাভাবে দর্শক দেখে আনন্দ পায়।’ হাসতে হাসতে বললেন এলভিন। সে যাত্রায় টিভিসিটা খুব বেশি সাড়া না ফেললেও এ বছরের শুরুর দিকে আরেকটি প্লাস্টিক ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন করেই এলভিন মডেল হিসেবে আরো ভালো অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। এটি ছিল টিটো রহমানের নির্দেশনায় বেঙ্গল প্লাস্টিকের টিভিসি। এখানে এলভিন কনে। তাঁকে সাজিয়ে আনা হয় পাত্রের সামনে। আর তখনই তিনি প্রতিবাদ করেন। তাঁর সংলাপ, ‘আই অ্যাম নট প্লাস্টিক’ খুব জনপ্রিয় হয়। আর এই টিভিসিতে প্লাস্টিকের ডলের ব্যবহার থাকায় আরো বেশি সাড়া পড়ে। এলভিন আর ওই প্লাস্টিকের ডলের বিলবোর্ড নজরে পড়ে অনেকেরই।
এগুলো ছাড়াও এলভিন করেছেন অ্যাপেক্স শু, প্রাণ পটেটো ক্রাকার্সসহ বেশ কিছু বিজ্ঞাপন।
You must be logged in to post a comment.