নাদিয়া নদী। তার প্রতিটি টিভিসিই জনপ্রিয়। মডেল হয়েছেন ২০টির মতো বিজ্ঞাপনচিত্রে। জনপ্রিয় এ তারকাকে নিয়ে লিখেছেন মাসিদ রণ। ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন।
নদীর যাত্রা শুরু ২০০৯ সালে। প্রথমেই বাংলালিংকের টিভিসি। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম বন্ধু এফএনএফ প্যাকেজ নিয়ে নির্মিত বড় বাজেটের টিভিসি। আর এতে নিজেকে ঠিকঠাক মেলে ধরে ওয়ারীর সাধারণ মেয়ে থেকে এক ঝটকায় হয়ে উঠলেন তারকা নাদিয়া নদী।
এরপর আসতে থাকে বড় বাজেট আর বড় নির্মাতার কাছ থেকে কাজের অফার। কাজ করেছেন পেপসোডেন্ট, ক্লোজ-আপ কাছে আসার গল্পসহ আরো বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে।
নদীর দ্বিতীয় বিজ্ঞাপনটি ছিল নির্মাতা অমিতাভ রেজার সঙ্গে। এটি ছিল ফ্রুটিকা জুসের একটি টিভিসি। এটি করার সময়ই অমিতাভ রেজা বুঝে ফেললেন, নদীর বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে অভিনয়ের দারুণ দক্ষতা। তাই যখনই বড় বাজেটের অভিনয়নির্ভর কাজ আসে, তখনই তিনি নদীকে ডাকেন। যেমন ডেকেছিলেন ২০১২ সালে জুঁই নারিকেল তেলের টিভিসির জন্য। এই এক টিভিসিই নদীকে দেশের প্রথম সারির মডেলের তকমা এনে দেয়। পরিচিতি এনে দেয় সারা দেশে। এখানে তাঁর সহমডেল ছিলেন অভিনেতা আরেফিন শুভ। টিভিসিটি প্রচারের পর তো রাস্তা দিয়ে হাঁটাই দায় হয়ে পড়ে নদীর। গলির মোড় বা দোকানের কর্মচারী ছেলেটিও তাঁকে দেখলে গেয়ে উঠত, ‘বেঁধে রাখুন চুলের ফাঁদে’। কেমন ছিল সেই সময়ের অভিজ্ঞতা,জানতে চাইলে নদী বলেন-জুঁই কর্তৃপক্ষ চাইছিল একটি লম্বা চুলের মেয়েকে, যার মধ্যে আবার একটা বাঙালি বউয়ের গুণ আছে। অমিতাভ রেজা তাই আমাকেই পছন্দ করলেন। এরপর শুরু হলো প্রস্তুতি পর্ব। শুধু আমার চুলের যত্নে মুম্বাই থেকে তিন দিনের জন্য এক বিউটি এক্সপার্টকে আনা হয়, যিনি প্যান্টিন শ্যাম্পুর টিভিসির জন্য বলিউড তারকা ক্যাটরিনা কাইফের হেয়ার এক্সপার্ট ছিলেন। এই তিন দিনের জন্য নাকি ওই এক্সপার্টকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছিল।
টিভিসিটিতে নদীর স্বামী চরিত্রের শুভ তাকে পাত্তা না দিয়ে অফিসে চলে যেতে চান। তখন সে আনমনে চুল খুলতে থাকে। তার চুল দেখেই শুভ অফিসে না গিয়ে তার সঙ্গে রোমান্স করতে এগিয়ে আসে। নদী বলেন, ‘তো আমরা দুজন কোনোভাবেই ফ্রি হয়ে কাজটি করতে পারছিলাম না। আসলে কাজের শুরু থেকেই সবাই আমাকে বলছিল, তোমার ওপর কতগুলো টাকা ইনভেস্ট হয়েছে তা তো বুঝতেই পারছ। এখন ভালো না করলে পুরো আয়োজনটাই ব্যর্থ হবে। শেষমেশ অমিতাভ রেজার সহকারী আমাকে মেয়ে সেজে দেখাচ্ছিল কিভাবে শুভ ভাইকে কাছে ডাকতে হবে। আর তাঁর বউ ছেলে সেজে শুভ ভাইকে দেখাচ্ছিল সে কিভাবে আমার ডাকে সাড়া দেবে। এই ব্যাপারটি খুব মজা লেগেছিল।’ টিভিসিটি প্রচারের পর ভক্ত আর বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ভীষণ সাড়া পেয়েছিলেন নদী। তিনি বলেন, ‘আমার অনেক বন্ধু শুধু আমাকে বড় পর্দায় দেখার জন্য স্টার সিনেপ্লেক্সে যেত। কারণ ছবির মাঝখানে আমার টিভিসিটি দেখানো হতো ওখানে।
একবার আমিও গেলাম বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে। বিরতির সময় আমার টিভিসিটি দেখালে আমার এক ফ্রেন্ড চেয়ারে দাঁড়িয়ে পুরো অডিয়েন্সকে জোর গলায় বলতে লাগল, টিভিসির মেয়েটা এখানে। আমার পাশেই বসা। এরপর আর আমি যাই কই! ছবি শেষে প্রায় এক ঘণ্টা আমি বেরোতেই পারিনি। একের পর এক দর্শক আসছে কথা বলতে, ছবি তুলতে।’
এ তো গেল পুরান কাজের খরব।
বর্তমানে দেশের সব কটি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে তাঁর ডিপ্লোমা গুঁড়া দুধের টিভিসিটি। এখানে শান্ত ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক পাত্রীর চরিত্রে তাঁকে দেখা যাচ্ছে। এই টিভিসিটি দেখে বন্ধু-বান্ধব বা অনেক কো-আর্টিস্টও বিশ্বাস করতে পারছে না যে এটাই নাদিয়া নদী। কারণ তাঁরা জানে নদী মানেই ছটফটে, প্রাণবন্ত। যেমনটি তাঁকে দেখা গেছে ভিশন এলইডি টিভির বিজ্ঞাপনে।
এখানে টিভি কিনতে আসা এক বাচাল বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। টিভিসিটি দেশের পাশাপাশি হিন্দি ভাষায় ভারতের স্টার প্লাস চ্যানেলে নিয়মিত প্রচার হচ্ছে।
সব মিলিয়ে এখন নদী মানে যেকোনো ভালো বিজ্ঞাপনের মডেল। প্রতিনিয়ত আসা যেনতেন টিভিসির অফার ফিরিয়ে দিতে তাঁর এক সেকেন্ডও সময় লাগে না।
You must be logged in to post a comment.