আন্তর্জাতিক

উপমুখ্যমন্ত্রী বাইসাইকেলে, সমাজকল্যাণমন্ত্রী বাসে আর পরিবেশমন্ত্রী এলেন রিকশায়


নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে সবার আগে সচিবালয়ে পৌঁছালেন পর্যটনমন্ত্রী। উপমুখ্যমন্ত্রী এলেন বাইসাইকেল চালিয়ে, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এলেন বাসে চড়ে,পরিবেশমন্ত্রী এলেন ই-রিকশায়। আর মুখ্যমন্ত্রী নিজের গাড়ি দিয়ে লিফট দিলেন আরও দুই মন্ত্রীকে। এই হলো ভারতের দিল্লির বাস্তবতা।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা নিজেই নিজের কাজ করেন,সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করেন- এমন কথা শোনা যায় মাঝে মাঝেই। কিন্তু উপমহাদেশের কোথাও বাসে চড়ে কিংবা সাইকেল চালিয়ে মন্ত্রীরা সচিবালয়ে যাচ্ছেন,লোকজনের কথা শুনছেন বাসে বসে- কিছুদিন আগে বললেও হয়ত কেউ বিশ্বাসই করতেন না। গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দিতেন। বিশ্বাস করবেনই বা কেমন করে। উপমহাদেশের ভিআইপি কালচারের কারণে রাস্তায় কতক্ষণ বসে থাকতে হয়। তা হোক সে মুম্বাই,কলকাতা কিংবা ঢাকা অথবা কাঠমাণ্ডু;উপমহাদেশের যে কোনও শহরেই একই অবস্থা।

.বাইসাইকেল চালিয়ে সচিবালয়ে এলেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনিশ সিসোদিয়াতবে নতুন বছরের প্রথম দিনেই শুক্রবার সকাল থেকে জোড়-বিজোড় ফর্মুলায় গাড়ি চলাচল শুরু হয় ভারতের দিল্লিতে। বায়ুদূষণ ঠেকানোর কথা বলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের নেওয়া এ সিদ্ধান্তের কারণেই মন্ত্রীরা নিজেদের গাড়ি ছেড়ে কেউ বাসে,কেউ সাইকেল চালিয়ে কিংবা ই-রিকশা চড়ে সচিবালয়ে এসেছেন। তাতে খেদ নেই কারও। বরং জোড়-বিজোড় পদ্ধতি সফল হবে বলেই আশাবাদ তাদের।
এ ফর্মুলা প্রাথমিকভাবে চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। নিয়ম অনুযায়ী, যে সব গাড়ির নম্বর শেষ হচ্ছে এক, তিন, পাঁচ, সাতের মতো বিজোড় নম্বরে, তা দিল্লিতে পথে নামতে পারবে শুধু বিজোড় সংখ্যার দিনে। ঠিক তেমনই, জোড় সংখ্যায় শেষ হচ্ছে যে সমস্ত গাড়ির নম্বর, তা পথে চলতে পারবে জোড় সংখ্যার দিনে। সোম থেকে শনি, সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত থাকবে বিধিনিষেধ।
নিয়ম ভাঙলেই দিতে হবে ২০০০ রুপি জরিমানা। রবিবার অবশ্য সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
দিল্লির পর্যটনমন্ত্রী কপিল মিশরা শুক্রবার ৯টা বাজার কয়েক মিনিট আগেই পৌঁছে যান সচিবালয়ে। তরুণ এ মন্ত্রী জানান, যমুনা বিহার আবাসিক এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে আসতে তার মাত্র ২০ মিনিট সময় লেগেছে। সাধারণত দিনের যেকোনও সময় আসতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগত।
প্রথম দিন (১লা জানুয়ারি) বেজোড় তারিখ হওয়াতে মন্ত্রী নিজের বেজোড় সংখ্যার রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারতেন। কিন্ত তিনি তা করেননি। এ ব্যাপারে মন্ত্রী মিশরা বলেন,রাস্তার দৃশ্যপটে আগের তুলনায় অনেক পার্থক্য আছে,যানবাহন কম। ‘আমি কাউকে আইন ভঙ্গ করতে দেখিনি। দিল্লির মানুষ যখন কষ্ট করছে তখন আমাদেরকেও কষ্ট করতে হবে। আমি চাইলে আমার গাড়ি নিয়ে সচিবালয়ে আসতে পারতাম কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ১৪ দিন মোটরসাইকেল চালিয়ে আসব।’ ৫-৬ মাস পর মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন বলেও জানান এই মন্ত্রী।
বেজোড় সংখ্যার গাড়ি থাকায় প্রথম দিন (শুক্রবার) সচিবালয়ে গাড়ি নিয়েই এসেছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী মানিষ সিসোদিয়া। কিন্তু শনিবার তিনি গাড়ি নিয়ে আসতে পারেননি। শনিবার সচিবালয়ে এলেন বাইসাইকেল চালিয়ে। এর আগে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন,দিল্লির মানুষেরা নিজেদের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে। সরকার শুধু তাদের সহযোগিতা করছে।
এ পদ্ধতিতে ১৫ দিনের পরীক্ষামূলক যান চলাচলে বায়ু দূষণ কমবে বলে আশা করেন এই মন্ত্রী। তিনি জানান,দিল্লির এই জোড়-বেজোড় ফর্মুলার প্রতি সারা বিশ্ব নজর রাখছে। যদি এতে দূষণ কমে তাহলে অনেক শহরে এ পদ্ধতি চালু হতে পারে।

.জোড়-বেজোড় নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোয় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে স্বেচ্ছাসেরা

নিজের গাড়ির নম্বর বিজোড় সংখ্যার হওয়ায় প্রথম দিনেই গাড়ি বের করতে পেরেছেন কেজরিওয়াল। কেবল তাই নয় নিজের গাড়িতে করে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দিয়েছেন জোড় নম্বরের গাড়ির মালিক দুই মন্ত্রীকে।

দিল্লি সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী সন্দীপ কুমার সচিবালয়ে নিজের গাড়ি রেখে আসেন বাসে চড়ে।  নিজের বাস যাত্রাকে ‘চাপমুক্ত’ হওয়ার উপায় হিসেবে দেখছেন সন্দীপ কুমার। বাস যাত্রীদের সঙ্গে  বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পেরেছেন বলে জানান তিনি। সন্দীপ কুমার প্রায়ই বাসে সচিবালয়ে আসেন বলে জানিয়ে দাবি করেন বাস যাত্রায় তিনি ‘অভ্যস্ত’। এ পদ্ধতিতে যতদিন গাড়ি চলবে ততদিন সন্দীপ কুমার বাসেই আসবেন বলে জানান।

.বিজেপির শীর্ষনেতা বিজয় গোয়েলও রাস্তায় সাইকেল চালান

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ইমরান হোসেন আসেন ই-রিকশায়। তিনি জানান,সচিবালয়ের কাছে বাল্লিমারা থেকে তিনি ই-রিকশাতে চড়েন। এ যাত্রা তার খুব ভালো লেগেছে। বাকি দিনগুলোও তিনি ই-রিকশাতে আসবেন।

শুক্রবার নিয়ম ভঙ্গের দায়ে জরিমানা করা হয় ২’শ ৩ জনকে। এদিন সকাল ৮ টা থেকে নতুন ফর্মুলায় গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার ৩৩ মিনিটের মধ্যেই জরিমানা গুণতে হয় এক চালককে। পরে নিয়ম ভঙ্গের দায়ে ১৩৮ জনকে জরিমানা করে দিল্লি পুলিশ। আর বাকিদের জরিমানা করেছে পরিবহন বিভাগ। সূত্র: এনডিটিভি।