চার বছর বয়সী জিহাদের শুক্রবার বিকালে ওই পাইপে পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিস, সেই সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় অন্যরাও।
রশিতে বেঁধে অনেকদূর পর্যন্ত ক্যামেরা নিয়ে ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপের নিচের যে ছবি তোলা হয়েছে, তাতে কোনো মানবদেহের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি; তবে ছবি এসেছে কাপড়, স্যান্ডেলের মতো আবর্জনার।
এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধারকর্মী দলের সঙ্গে কথা বলে তার ধারণা হয়েছে যে পাইপের ভেতরে শিশুটি নেই।
তবে তারপর বিষয়টি নিশ্চিত হতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা।
২৩ ঘণ্টার অভিযানের পর শনিবার বেলা আড়াইটায় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে সকাল ১০টায় ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মো. হালিম সাংবাদিকদের বলেন, “ভেতরে কোনো ভিকটিম নেই।”
অভিযান শেষ পর্যায়ে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমাদের আর কোনো কাজ নেই। দেশীয় পদ্ধতিতে স্থানীয় মানুষ যে চেষ্টা করছে, আমরা তাতে সহায়তা করছি।”
জিহাদ ভেতরে নেই বলে এখন দাবি করলেও শুক্রবার বিকালে ও সন্ধ্যায় তার কণ্ঠ শুনতে পাওয়ার কথা উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছিলেন। তাকে অক্সিজেন ও খাবার দেওয়ার কথাও বলেছিলেন তারা।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে ডিএডি হালিম বলেন, “আমি ভোর ৪টার দিকে এসেছি। এর আগে আমাদের কে কী বলেছিল, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।”
এদিকে জিহাদের বাবা মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নৈশ প্রহরী নাসিরউদ্দিনকে শুক্রবার ভোররাতেই পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। সকাল পর্যন্ত তাকে ছাড়া হয়নি।
এই বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে আমাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত তিনি আমাদের কাছে থাকবেন।”
শিশুটির মামা মনির শনিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারাই জিহাদের বাবাকে নিরাপদে রাখতে পুলিশকে বলেছিলেন।
আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি না রেখে পুলিশ হেফাজতে কেন- জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
পুলিশ নিয়ে গেছে, না কি পুলিশের কাছে যাওয়া হয়েছিল- জানতে চাইলে মনির বলেন, “পুলিশই নিয়ে গেছে। আমরা এখন জানি না তিনি কোথায় আছেন।”
দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট জিহাদকে নিয়ে শঙ্কায় তার মা খাদিজা বেগম প্রায় বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
যে স্থানে গভীর নলকূপে জিহাদ পড়ে গিয়েছিল বলে বলা হচ্ছে, সেই শাহজাহানপুর রেল কলোনির ৪১ নম্বর বিল্ডিংয়ে নাসিরের বাসা।
নাসির রাতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে জিহাদ ওই গর্তে পড়ে যায় বলে এক প্রতিবেশী তাদের জানিয়েছিলেন।
স্থানীয় গৃহবধূ রাহেলা ও আরিফ নামের এক কিশোরও সাংবাদিকদের একই কথা বলেন। তাদের দুজনকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার সকালে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
জিহাদ পাইপের ভেতরে পড়েছে- এই ধারণার ভিত্তি কী জানতে চাইলে তার মামা মনির বলেন, “আসলে আমরা নিশ্চিত নই। আশে-পাশের লোকজন তাকে পড়তে দেখেছে বলেছিল। আর ফায়ার সার্ভিসও তো বলেছে- ও চারবার ওঠার চেষ্টা করেছিল, জুস খেয়েছে, অক্সিজেন পাঠানো হয়েছে।”
জিহাদ যদি পাইপের ভেতরে না থাকে, তাহলে অপহরণের কোনও আশঙ্কা করছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে কারো শত্রুতা নেই। জিহাদকে সবাই পছন্দ করত। আমার মনে হয় না, কেউ এধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে।”
১৪ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপে আড়াইশ মিটার গভীর পর্যন্ত ক্যামেরা নামিয়ে ঘণ্টাখানেক তল্লাশি চালানোর পর ভোররাতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান জানান, শিশুটির কোনো সন্ধান তারা পাননি।
প্রথম দফায় পাইপের আড়াইশ মিটার গভীর পর্যন্ত ক্যামেরা নামিয়ে একটি কাপড়, স্যান্ডেল, কর্কশিটের টুকরো, টিকটিকি ও কাগজের মতো অবয়ব দেখা যায়। দ্বিতীয় দফায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সার্ভেইলেন্স আইপি ক্যামেরা নামিয়েও কোনো শিশুর দেহের অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
–বিডি নিউজ অবলম্বনে