বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), যা ৩৫তম বিসিএস থেকেই কার্যকর হতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য মাইন উদ্দিন খন্দকার শুক্রবার জানান, বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মান তিনশ’ নম্বরে উন্নীত এবং পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টা করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিসিএসে বর্তমানে এক ঘণ্টায় একশ’ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে হয় চাকরিপ্রার্থীদের। একশ’ নম্বরের এই পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থীদের পাসের সংখ্যা অনেক বেশি হয় বলে পিএসসি কর্মকর্তাদের অভিমত।
মাইন উদ্দিন বলেন, “পাসের সংখ্যা বেশি হওয়ায় লিখিত পরীক্ষার জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার প্রার্থীকে মনোনীত করতে হয়। অথচ লিখিত পরীক্ষার জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার প্রার্থী মনোনীত করলে যথাযথভাবে ও ঝামেলামুক্ত পরীক্ষা নেয়া যাবে। এজন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।” এছাড়া লিখিত পরীক্ষার প্রার্থী বেশি থাকলে পরীক্ষার সূচি নির্ধারণ, অনেকগুলো খাতা মূল্যায়নসহ নানা ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় বলেও জানান তিনি।
সবশেষ ৩৪তম বিসিএসে ৪৬ হাজার ২৫০ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। এই বিসিএসে দুই হাজার ৫২টি পদের বিপরীতে দুই লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী প্রিলিমিনারিতে অংশ নেন। তবে তিন ঘণ্টার পরীক্ষার জায়গায় কমিশনের অনেক সদস্যই প্রিলিমিনারিতে দুই ঘণ্টায় দুইশ’ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার জন্য বোর্ড সভায় মত দিয়েছেন বলে জানান মাইন উদ্দিন।
“আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি সব কিছু বিবেচনা করে মন্ত্রণালয় দুইশ’ নম্বরের দুই ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেবে। অনুমোদন পেলে ৩৫তম বিসিএস থেকেই নতুন পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে,” বলেন তিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনে পিএসসির প্রস্তাব পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, “এনিয়ে কাজ চলছে। পরবর্তী সচিব সভায় পিএসসির প্রস্তাবটি তোলা হবে।”
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুস সোবহান সিকদার (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব) জানিয়েছিলেন, ৩৫তম বিসিএসের জন্য বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ১৪৯টি পদ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে তা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের (ক্যাডার) সঙ্গে গত কয়েকদিন মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া মেলিনি। চাকরি প্রত্যাশীদের বিক্ষোভের মুখে ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল পিএসসি দুই দফায় ঘোষণা করতে বাধ্য হওয়ার পর থেকে কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছার উদ্দিন সাংবাদিকদের এড়িয় চলছেন। এরআগে ৩১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র সংকটে পড়ে পিএসসি। ওইসময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে রাজধানীর বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার জন্য পিএসসিকে কেন্দ্র হিসাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। পরবর্তীতে চাকরিপ্রার্থীদের আপত্তির মধ্যেই ৩৩তম বিসিএসে প্রতিদিন দুটি করে লিখিত পরীক্ষা নেয় পিএসসি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ থেকে ৩১ মার্চ সকাল ও বিকালে দুটি করে ৩৪তম বিসিএসের আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা হয়। ৩৪তম বিসিএসে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা নেয়ার জন্য কেন্দ্র হিসাবে বরাদ্দ দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে একটি নির্দেশনাও জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
–বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অবলম্বনে