শুভ সকাল ডেস্কঃ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অবন্তীপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশীর মধ্যে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে যুদ্ধ যুদ্ধ উত্তেজনা। এ পরিস্থিতিতে সামনে চলে এসেছে দেশদুটির সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি। ২০১৮ সালের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার সূচকে, শক্তিধর সেনাবাহিনীর মধ্যে ভারতের অবস্থান চতুর্থ আর পাকিস্তান ১৭তম। সাধারণ অস্ত্রের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে ভারত এগিয়ে থাকলেও, পরমাণু অস্ত্রে দেশদুটি প্রায় সমানে সমান। ভারত বনাম পাকিস্তান কার অস্ত্র বেশি।
কাশ্মীরের পুলওয়ামার অবন্তীপুরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনার পর পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এরইমধ্যে দেশদুটি দিয়েছে পাল্টাপাল্টি যুদ্ধের হুমকি। যার কারণে সামনে চলে আসছে দুদেশের সামরিক শক্তির বিষয়টি।
২০১৮ সালে ভারতের মোট সামরিক ব্যয় ছিল পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে পাকিস্তানের মোট সামরিক ব্যয় ছিল এক হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মোট সদস্যসংখ্যা ১৪ লাখ। এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে ১২ লাখ, বিমানবাহিনীতে এক লাখ ২৭ হাজার দুইশ’ এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ৬৭ হাজার ৭০০ সেনা। বিপরীতে পাক বাহিনীতে রয়েছে ছয় লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ সদস্য। এরমধ্যে সেনাবাহিনীতে ৫ লাখ ৬০ হাজার, বিমানবাহিনীতে ৭৮ হাজার এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ৪২ হাজারের মতো সেনা।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ট্যাংক, ৩ হাজার একশ’ পদাতিক যুদ্ধ-যান, ৩শ’ ৩৬টি অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান বা এপিসি এবং ৯ হাজার সাতশ’ ১৯টি কামান। এছাড়াও অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস ফোর হান্ড্রেড কেনার জন্য সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত। অন্যদিকে পাক সেনাবাহিনীর রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার ট্যাংক, ১৬শ’ ৫টি এপিসি এবং ৪ হাজার ৪শ’ ৭২টি কামান।
সেনাবাহিনীর মতো আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ভারতের বিমানবাহিনীও। রয়েছে মিগ টুয়েন্টি নাইন, মিগ টুয়েন্টি ওয়ানের ৮শ’ ১৪টি যুদ্ধবিমান। এছাড়াও আছে কয়েকশ’ অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার এবং র্যাডার। বিপরীতে পাক বিমান বাহিনীর আছে চাইনিজ এফ/সেভেন/পি/জি, যুক্তরাষ্ট্রের এফ সেভেন্টিনের মতো চারশ’ ২৫টি যুদ্ধবিমান।
যুদ্ধবিমান বহনে সক্ষম দুটি বিমানবাহী রণতরী, ১৬টি সাবমেরিন, ১৪টি ডেসট্রয়ার এবং কয়েকশ’ অত্যাধুনিক নৌযানে সমৃদ্ধ ভারতীয় নৌবাহিনী। আর পাকিস্তান নৌবাহিনীতে আছে ৯টি ফ্রিগেট, ৮টি সাবমেরিনসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ।
ভারতের রয়েছে নিজের উদ্ভাবিত নয় ধরণের ব্যলিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। যার অধিকাংশই পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম। এগুলোর মধ্যে ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার অগ্নি-৩ ক্ষেপণাস্ত্র সবচেয়ে বিধ্বংসী। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে চীনা প্রযুক্তির বহনযোগ্য স্বল্প ও মধ্যপাল্লার বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারতের যেকোন অংশে আঘাত হানতে সক্ষম। শাহিন-২ পাকিস্তানের নিজের তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। এর পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার।
সামরিক শক্তির দিক থেকে প্রতিবেশী ভারতের থেকে পাকিস্তান দুর্বল হলেও, পরমাণু অস্ত্রে খানিকটা এগিয়ে ইসলামাবাদ। পরমাণু অস্ত্রের সঠিক কোন পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও, ধারণা করা হয় পাকিস্তানের রয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০টি অস্ত্র। অন্যদিকে ভারতের রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি পরমাণু অস্ত্র। কাশ্মীর যেন একটি ভূখণ্ডমাত্র নয়, দুই দেশের ক্ষমতা পরীক্ষার ক্ষেত্র। একে কেন্দ্র করে গত সাত দশকে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান। এতে অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর অস্ত্রের ব্যবসা বাড়লেও অধরাই রয়ে গেছে পাক-ভারত সংকট সমাধানের স্বপ্ন।