বিনোদন

কথা রেখেছিলেন ফারিয়া


masid rono1লাক্সতারকা ফারিয়া শাহরিন। কাজ নেন বেছে বেছে। তবে যেটি করেন, তা দেখে নড়েচড়ে বসতে হয়। বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারের সেই সাড়া জাগানো টিভিসির এই মডেলকে নিয়ে লিখেছেন মাসিদ রণ। ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন 

মিডিয়ার প্রতি দুর্বলতা ছোটবেলা থেকেই। ১৯৯৫ সালে ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ান। পড়তেন ক্লাস টুতে। বাবা কুমিল্লার এডিসি জেনারেল ছিলেন। সেখানেই পড়াশোনার পাশাপাশি গান-নাচ ও আবৃত্তি শিখতেন কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে। সেই সুবাদে বিটিভির জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’তে অংশ নেন ফারিয়া। সে আসরে বিজয়ী হতে না পারলেও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম পারফর্ম করা ও দেশের গুণী শিল্পীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগটা কিন্তু ঘটেই গেল! প্রাথমিক শেষ করতে না-করতেই নাচের আগ্রহ হারিয়ে গেল। তবে গান শিখেছেন অনেক বছর। তাই হতে পারতেন গায়িকা। আবার আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা মেয়েটি হতে পারতেন আইনজীবীও। কিন্তু হয়ে গেলেন নায়িকা। তবে দ্বিতীয় দফায় মিডিয়ায় আসেন ২০০৭ সালের লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়ে। সে বছর প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া দুই প্রতিযোগী বিদ্যা সিনহা মিম ও আলভির চেয়ে অনেক আগেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই মডেল, যার পেছনে রয়েছে মাত্র একটি বিজ্ঞাপন। বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারের টিভিসিতে ঠোঁটের নিচে তিলের একটি মিষ্টি মেয়ে মন খারাপ করা বাচ্চা ছেলেটিকে বেলুন কিনে দিয়ে মুখের হাসি ফিরিয়ে আনেন। রাস্তার পাশে ক্লান্ত বৃদ্ধ মহিলাকে বাজারের ব্যাগগুলো এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করেন, মহল্লার ছেলেরা ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পাশের বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যখন ভয়ে জড়সড়, তখন মেয়েটি বাড়িওয়ালার কাছে অনুনয় করে বলটি চেয়ে আনেন। সবশেষে বাংলালিংকের কাস্টমার কেয়ারে নিজের চেয়ারে বসে দায়িত্বশীল হয়ে পেশা পালনের কথা দেন। ২০০৮ সালে নির্মিত গোলাম হায়দার কিসলুর বানানো ‘কথা দিলাম’ শিরোনামের এই টিভিসি বাজিমাত করে।

fariaফারিয়াও পৌঁছে যান দেশের প্রতিটি শহর ও গ্রামের ঘরে ঘরে। লাক্স প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার আপ হওয়ার পর ফারিয়া প্রকাশ্যে বলেছিলেন প্রতিযোগিতায় প্রথম না হতে পারলেও প্রমাণ করে দেব ‘আমিই বেস্ট’। বিজ্ঞাপনটিতে দক্ষতা দেখিয়ে কথা রাখলেন।  লাক্স প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়েই মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তিনি মডেল হন বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারের এই বিগ বাজেটের বিজ্ঞাপনে। তাঁর সময়ে প্রথম হওয়া বিদ্যা সিনহা মিম তখনো লাইমলাইটে আসার জন্য সুযোগ খুঁজছিলেন। মিডিয়ার সবাই বুঝতে পারেন, ফারিয়াই সেরা। তখন মিম, আলভি, ফারিয়া একসঙ্গে একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তাতে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীও। তিনি সবার সামনে ফারিয়াকে বলেছিলেন, ‘এই মেয়ে, তুমি কেমন করে থার্ড হলে? তোমারই তো ফাস্ট হওয়া উচিত ছিল!’ ফারিয়া এরপর চার বছর ধরে বাংলালিংকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়ার পাশাপাশি তিব্বত, আরএফএলের মতো অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন। ‘কথা দিলাম’ বিজ্ঞাপনটি করার পর তাঁর চলার পথ মসৃণ হলেও এই কাজের সুযোগ পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে। তিনি অডিশন দিতে গিয়ে দেখেন দেশের অনেক জনপ্রিয় মডেলও অডিশনে। শোনা যাক ফারিয়ার মুখে, “কোনো মেকআপ ছাড়াই মাকে নিয়ে অডিশনে গিয়েছিলাম। দেখি অন্যরা খুব সেজেগুজে এসেছে। প্রথম দুই দিন মা আপত্তি করেননি। কিন্তু তৃতীয় দিন কিছুতেই এজেন্সিতে আমাকে নিয়ে আসতে রাজি নন তিনি। জোর করে মাকে নিয়ে গিয়ে দেখি আমি আর সারিকা ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে নেই। আমার আগেই সারিকাকে ডাকা হলো। তখন সে জনপ্রিয় তারকা। তাই আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমরা যখন বাসায় ফিরছিলাম, তখন রাত ১১টা। মাঝপথে আসতেই এজেন্সি থেকে ফোন। তারা বলল, এখনই যেন আমরা আবার এজেন্সিতে যাই। কিন্তু মা কিছুতেই রাজি হচ্ছন না। পরে আমি কাঁদতে শুরু করি। তাই মা আমাকে নিয়ে গেলেন। যাওয়ার পরই তারা আমাকে এক্সপ্রেশন দিতে বলল একটি কামিজ পরিয়ে, যেটা পরে বিজ্ঞাপনটিতে পরেছিলাম। তা দেখে সবাই চেঁচিয়ে বলল, তুমিই সিলেক্ট। সকাল সাতটায় চলে এসো। আমি ‘থ’। শুটিং ঠিক সময়ে শুরু হলো পরের দিন। আমি একটু পার্লারে যাওয়ারও সময় পেলাম না। কাজ শেষে বড় কোনো আশাও ছিল না। বুঝতেই পারিনি, আমি কী করে এলাম। এডিটিং প্যানেলের একজন আম্মুকে প্রথম বলেছিলেন, ‘আন্টি, আপনার মেয়ে আগামী দিনের সুপারস্টার। ও যে কী করেছে, তা দুদিন পরেই টের পাবেন।’ সত্যি তাই। টিভিসিটি প্রচারের পর থেকে আর পাবলিক প্লেসে যেতে পারতাম না। মানে এক ঝটকায় তারকা হওয়া যাকে বলে আর কি (হাঃ হাঃ হাঃ)।”

final4প্রথম থেকেই জনপ্রিয়তা পাওয়া গুণী এই মডেল-অভিনেত্রী হঠাৎ করে মিডিয়ায় অনুপস্থিত। এর কারণ জানতে চাইলে ফারিয়া বলেন, ‘আমি কখনো টাকার জন্য মিডিয়ায় আসিনি। তাই গড়পড়তা কাজ করে ভক্তদের হতাশ করার কোনো মানে নেই। যে কাজটা করে শান্তি পাই, শিল্পীর যথার্থ পারিশ্রমিক পাই এবং নতুন কিছু শিখতে পারি, সেখানেই কাজ করি। কখনো কোনো খারাপ কাজ করিনি, করবও না। অনেক ভালো ভালো প্রজেক্টে আমি যুক্ত হইনি নানা কারণে। কিন্তু অন্তত মানসিক শান্তি নিয়ে বেঁচে আছি।’ এদিকে ক্যামেরার সামনে না থাকলেও ক্যামেরার পেছনে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই তারকা। বর্তমানে মালেশিয়ায় আছেন মিডিয়া কমিউনিকেশনের ওপর পড়াশোনার জন্য। ফিরে এসে নাটক-বিজ্ঞাপন নির্মাণ ও প্রোগ্রাম তৈরির ইচ্ছা তাঁর। আর অভিনয় না করলেও ভালো বিজ্ঞাপনে কাজ করে যাবেন সব সময়। মডেলিং নাকি তাঁকে খুবই আকর্ষণ করে। এটাই হয়তো তাঁর শেষ ঠিকানা।